ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযান, চন্দ্রযান-২ সফল না হওয়ায় ভারতের নাগরিক হিসাবে আমরা সবাই হতাশ হয়েছিলাম। গত ১৪ জুলাই, দুপুর ২টা বেজে ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের হরি কোটা থেকে ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান, চন্দ্রযান-৩ -র সফল উৎক্ষেপণ হয়েছে। অনেকের মনে এই প্রশ্নটিই বারং বার আসছে, যেখানে আমেরিকা, রাশিয়া ও চীনের চাঁদে পৌঁছাতে মাত্র ৪ দিন লাগে, সেখানে ভারতকে চাঁদে পৌঁছাতে কেন 40 দিন লাগল? আসল কারণ জেনে নেওয়া যাক।
ভারতকে চাঁদে পৌঁছাতে কেন 40 দিন লাগবে?
যেখানে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে আমেরিকা মাত্র ৪ দিনে চাঁদে পৌঁছে গেছিল, ১৩ বছর আগে চীন চাঁদে পৌঁছেছিল মাত্র ৪ দিনে, সেখানে এখন ভারতকে চাঁদে পৌঁছাতে কেন ৪০ দিন সময় লাগছে তা জানতে গেলে আগে জানতে হবে ভারত যে রকেটটি চাঁদে পাঠিয়েছে, সেই রকেটটি কিভাবে চাঁদে পৌঁছেছে।
প্রথমে বলে রাখি এর আগে ভারত ছাড়া যে কয়টি দেশ চন্দ্র অভিযান করেছে, তারা প্রত্যেকে সরাসরি পৃথিবীর অরবিট থেকে অর্থাৎ সরাসরি চাঁদে পৌঁছেছে। অন্য দিকে ভারত মোট পাঁচ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে চাঁদের দিকে রওনা হবে, তাই অনেকটা বেশি সময় লেগে যাবে।
এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যেখানে আমেরিকা, রাশিয়া ও চীন পৃথিবী থেকে সরাসরি চাঁদে রকেট পাঠিয়েছে সেখানে ভারত কেন পৃথিবীকে পাঁচবার পদক্ষিনের পর চাঁদে যাবে ?
ভারত কেন পৃথিবীকে পাঁচবার পদক্ষিন করে চাঁদে যাচ্ছে?
আমেরিকার চন্দ্র অভিযান এপেলো -১১ মিশনের রকেট উৎক্ষেপণের মাত্র চারদিনের থেকে কিছু বেশি সময়ে চাঁদে পৌঁছে গিয়েছিল মহাকাশচারীরা।
রাশিয়ার চন্দ্র অভিযানের ক্ষেত্রে লুনা -১ মিশনে চাঁদের কাছাকাছি রাশিয়ার রকেট পৌঁছতে সময় লেগেছিল মাত্র 36 ঘন্টা।
2010 সালে চীনের চন্দ্র অভিযান চ্যাংই -২ মিশনে পৃথিবী থেকে চাঁদে কক্ষপথে পৌঁছতে সময় লেগেছিল মাত্র ৪ দিন, আর চ্যাংই -৩ মিশনেও প্রায় একই সময় লেগেছিল। ৪ দিনে চাঁদে পৌঁছানো প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে যতটা কঠিন, ঠিক ততটাই ব্যয়বহুল।
আমেরিকা ১৯৬৯ সালে চাঁদে পৌঁছাতে তাদের মোট খরচ হয়েছিল পনেরশো কোটি টাকা, যা আজকের দিনে প্রায় পনের হাজার কোটি টাকার সমান। আর অন্য দিকে ভারতের চন্দ্রযান -৩ -র মোট খরচের পরিমান মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা যা সারা বিশ্বের সব থেকে সস্তা চন্দ্র অভিযান।
🔥আরও পড়ুনঃ-
👉 Govt Job 2023: IIT খড়গপুরে কর্মী নিয়োগ, মাধ্যমিক – উচ্চমাধ্যমিক পাশে আবেদন করা যাবে
ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এই চন্দ্র অভিযানকে সস্তা করার জন্য রকেটকে সরাসরি চাঁদে না পাঠিয়ে তারা কয়েক ধাপে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণের মাধ্যমে জ্বালানি বাঁচিয়ে তবে চাঁদে যাত্রা করবে।
সরাসরি চাঁদে যেতে গেলে রকেটের ইঞ্জিন প্রায় সব সময় চালু রাখতে হয় তাতে প্রচুর জ্বালানির আগে যেখানে ভারত খুব অল্প পরিমাণ জ্বালানি খরচে চাঁদে পৌঁছে যাবে।
কারণ ভারত তাদের রকেটকে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে মাত্র দুবার ইঞ্জিন চালু করবে, সেও আবার তিন বা চার সেকেন্ডের জন্য।
তারপর তারা মধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পেরিজি ও অ্যাপোজির মাধ্যমে খুব কম জ্বালানি খরচ করে চাঁদে পৌঁছে যাবে। যার জন্য তাদের প্রায় ৪০ দিন সময় লাগবে।
পেরিজি ও অ্যাপোজি কি?
রকেট যখন পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করবে তখন তাদের যে স্থানটি পৃথিবী থেকে রকেটের দূরত্ব কম থাকবে তাকে পেরিজি বলা হবে। আর যে স্থানটির দূরত্ব বেশি থাকবে তাকে অ্যাপোজি বলা হবে।
যত বেশি পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করবে তত বেশি অ্যাপোজির দূরত্ব বেড়ে যাবে অর্থাৎ পৃথিবী থেকে রকেটের দূরত্ব বেড়ে যাবে। তাই রকেট কম জ্বালানি খরচ করে, পৃথিবীকে পাঁচবার প্রদক্ষিনের পরে চাঁদে পৌঁছে যাবে। আপনারা আমাদের দেওয়া উপরের ছবিটি দেখলে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
এছাড়া বর্তমানে ভারতের কাছে এমন কোন রকেট নেই যাতে সরাসরি বেশি জ্বালানি খরচ করে চাঁদে পৌঁছানো যায়। ভারতের এই সস্তা চন্দ্র অভিযানের দিয়ে সকল বিশ্ববাসি তাকিয়ে রয়েছে। এই মিশনটি সফল হলে ভারত বিশ্বতে আরেকটি বড় রেকর্ড সৃষ্টি করবে।