১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসন্তোষের কারণে সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। এই প্রবন্ধে আমরা মহাবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করব।
কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে দেশবাসীর রাগ প্রকাশ পায় মহাবিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে। ব্রিটিশ শাসনে নির্যাতিত বিভিন্ন শ্রেণির রাগের ফল ছিল মহাবিদ্রোহ।
স্বাধীনতা সংগ্রামী দামোদর সাভারকর মহাবিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ‘ বলে উল্লেখ করেছেন। মহাবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল ছিল অপরিসীম।
মহাবিদ্রোহের কারণ
মহাবিদ্রোহের বিশেষত দুইটি কারণ রয়েছে দুইটি কারণের মধ্যে অসংখ্য অসংখ্য কারণ রয়েছে । বিশেষত দুইটি কারণ হলো-(i) পরোক্ষ কারণ ও (ii) প্রত্যক্ষ কারণ। দুইটি কারণ এবং তার মধ্যে যে অসংখ্য কারন রয়েছে সেগুলো হলো-
(i) পরোক্ষ কারণ
মহাবিদ্রোহের পরোক্ষ কারণগুলি পর্যালোচনা করলে কারণগুলিকে মোটামুটি কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় । যথা—
- (১) রাজনৈতিক কারণ,
- (২)সামাজিক কারণ,
- (৩)অর্থনৈতিক কারণ,
- (৪)সামরিক কারণ,
- (৫)ধর্মীয় কারণ।
সেগুলি এবং তার মধ্যে যে অসংখ্য কারন রয়েছে সেগুলো হলো:-
১. রাজনৈতিক কারণ
পলাশির যুদ্ধের (১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দ) পরবর্তী পর্যায়ে সুশাসনের অজুহাতে ক্লাইভের দ্বৈত শাসন নীতি প্রচলন, ওয়েলেসলি ও ডালহৌসির ভারতীয় রাজ্য গ্রাসের উদ্দেশ্যে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতির প্রয়োগ ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী করে তোলে।
মহাবিদ্রোহের পরোক্ষ কারণের মধ্যে রাজনৈতিক কারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক কারণ বলতে রাজনীতির নানা খুঁটিনাটি বিষয় এখানে ফুটে উঠেছে।রাজনৈতিক কারণের মধ্যে আরো যে নানাবিধ কারণ আছে সেগুলো হল-
স্বত্ববিলোপ নীতি:
গভর্নর-জেনারেল লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে বহু দেশীয় রাজ্য গ্রাস করেন। এভাবে একে একে ঝাঁসি,সাতারা, নাগপুর সহ বিভিন্ন রাজ্যে ব্রিটিশ সরকার গ্রাস করে। এই নীতি স্বত্ববিলোপ নীতি নামে পরিচিত।
অযোধ্যা দখল:
লর্ড ডালহৌসি তাঁর স্বত্ব বিলোপ নীতি প্রয়োগ করে সাতারা, ঝাঁসি, নাগপুর, সম্বলপুর প্রভৃতি রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ডালহৌসি অযোধ্যা দখল করে নবাবকে কলকাতায় নির্বাসন দেন। ফলে নবাবের অধীনে অনেক পরিবার সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। ব্রিটিশদের এসব কর্মকাণ্ড ভারতীয় নেতাদের ও জনগণকে চরমভাবে অসন্তুষ্ট করেছিল।
সম্রাটের প্রতি অসম্মান:
মহাবিদ্রোহের ঠিক আগে সম্রাটের প্রতি তেমন সন্মান ছিল না। অযোধ্যা সাম্রাজ্যটি শাসন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে ব্রিটিশরা জোর করে অযোধ্যা অধিগ্রহণ করে নেয়, এছাড়াও তাঞ্জোর ও কর্ণাটকের রাজা সহ নানা সাহেবের ভাতা ব্রিটিশরা বন্ধ করে দেয় যা চূড়ান্তভাবে ব্রিটিশদের দ্বারা দেশীয় রাজাদের অসম্মানে পরিচয়।
দেশীয়দেরকে উচ্চ পদ থেকে বঞ্চিতকরণ:
দেশীয়দের উচ্চ পদ থেকে বঞ্চিত করতো উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ রাজ কর্মচারীরা।উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ রাজকর্মচারীরা তাদের অধস্তন ভারতীয় কর্মচারীদের ঘৃণা ও অবজ্ঞা করত। ভারতীয় কর্মচারীরা কারণে-অকারণে ব্রিটিশ কর্মচারীদের কাছে হেনস্থার শিকার হত। অত্যাচারিত এই ভারতীয়দের মনে এভাবে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
ইংরেজ কর্মচারীদের অত্যাচার:
ইংরেজ কর্মচারীরা তাদের অধস্তন ভারতীয় কর্মচারীদের ঘৃণা ও অবজ্ঞা করত। ভারতীয় কর্মচারীরা কারণে-অকারণে ইংরেজ কর্মচারীদের কাছে হেনস্থার শিকার হত।অত্যাচারিত এই ভারতীয়দের মনে এভাবে ক্ষোভ বাড়তে থাকে।
🔥আরও পড়ুনঃ-
২. সামাজিক কারণ
ব্রিটিশদের জাতিগত অহমিকা, বিজেতার মনোভাব ও ভারতীয়দের প্রতি অপমানজনক ব্যবহার ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী করে তোলে। এমনকি ব্রিটিশরা ভারতীয়দের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও অবজ্ঞার চোখে দেখতো।
মহাবিদ্রোহের পরোক্ষ কারণ এর মধ্যে সামাজিক কারণ ও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন। সামাজিক কারণ বলতে এখানে সমাজের বিভিন্ন বিষয় ফুটে উঠেছে।সামাজিক কারণের মধ্যে আরো যে নানাবিধ কারণ আছে সেগুলো হল-
ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত সর্বত্র ইংরেজরা ভারতীয়দের ঘৃণার চোখে দেখত। বহু ইউরােপীয় ক্লাবের দরজায় লেখা থাকত কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ।ওয়ারেন হেস্টিংস বলেছেন,“কয়েক বছর আগে পর্যন্ত অধিকাংশ ইংরেজ ভারতীয়দের প্রায় বর্বর মনে করত।”
পাশ্চাত্য প্রভাব বিস্তার:
মহাবিদ্রোহে পাশ্চাত্য প্রভাব বিস্তার লাভ করেছিল।
উন্নয়নমূলক কাজের সন্দেহ পোষণ:
মহাবিদ্রোহে উন্নয়নমূলক কাজের সন্দেহ পোষণ হয়েছিল।
নারী শিক্ষার প্রবর্তন:
মহাবিদ্রোহী নারী শিক্ষার প্রবর্তন হয়েছিল।
৩. অর্থনৈতিক কারণ
পলাশীর যুদ্ধের পরে, ধীরে ধীরে দেশীয় রাজ্যগুলি ইংরেজদের অধিকারে চলে গেলে বহু দেশে কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়ে এবং স্বভাবত দেশীয় রাজাদের পাশাপাশি এরাও ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে।
মহাবিদ্রোহের পরোক্ষ কারণ এর মধ্যে অর্থনৈতিক কারণ ও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন। অর্থনৈতিক কারণের মধ্যে আরো যে নানাবিধ কারণ আছে সেগুলো হল-
নিপীড়নমূলক রাজস্ব নীতি:
মহাবিদ্রোহে ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশরা অত্যাচার চালাত নিপীড়িতভাবে রাজস্ব আদায় করত।
বহির্বাণিজ্যে একচেটিয়া ইংরেজ কর্তিত্ব:
বাইরে কোন বাণিজ্য হলেও সেখানে একচেটিয়া ইংরেজদের কর্তৃত্ব ছিল।
ধন সম্পদ পাচার:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অর্থ ও সম্পদ একনাগাড়ে পাচার করলে দেশীয় রাজ্যগুলির রাজকোশ শূন্য হয়ে পড়ে। দেশের আর্থিক দুর্দশা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
দেশীয় শিল্পের ধ্বংস সাধন:
ব্রিটিশরা দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে দিত। ভারতীয়দের উপর অত্যাচার চালাতো। দেশ ও শিল্পের ধ্বংস সাধন হয়েছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে।
বেকারত্ব বৃদ্ধি:
ভারতের বস্ত্রশিল্পসহ বিভিন্ন কুটিরশিল্প ধ্বংস হলে এসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ও কারিগরদের একটি বড়াে অংশ কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে আবার ব্রিটিশদের একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট ক্ষতির শিকার হয়। এর ফলে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
জমিদারি বণ্টনের বৈষম্য:
জমিদারি বন্টন এর বৈষম্য দেখা গিয়েছিল। মহাবিদ্রোহের সময় জমিদারি বন্টনে নানা বৈষম্য দেখা গিয়েছিল।
৪. সামরিক কারণ
১৮৫৭ -র মহাবিদ্রোহের আরেকটি কারণ ছিল ভারতীয় সেনা বাহিনীদের মধ্যে অসন্তোষ। এই অসন্তোষের বিভিন্ন কারণ ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ঠিকঠাকভাবে খাবার-দাবার দেওয়া হতো না, যত দূর দেশি বিপদ জনক স্থানে ভারতীয় সেনাদের পাঠানো হতো। টমাস মনরোর মতে, ইংরেজদের ব্যবহারে ভারতীয় সিপাহীরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছিল।
বেতন বৈষম্য:
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কম বেতন দেওয়া হতো না। যত পরিমাণে ভারতীয় সেনাবাহিনীদের খাটিয়ে নেওয়া হতো তত পরিমাণে তারা পারিশ্রমিক পেতো নয়। তাই মহাবিদ্রোহে বেতন বৈষম্য দেখা গিয়েছিল।
দেশীয় সিপাহীদের প্রতি অবজ্ঞা ও অত্যাচার:
দেশীয় সিপাহীদের প্রতি ইংরেজরা শ্রদ্ধাশীল ছিল না। নানাভাবে তাদের উপর অত্যাচার চালাতো। নানা ভাবেঅবজ্ঞা করতো।
সামরিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি:
সামরিক কর্মকর্তা যারা ছিল তারা দুর্নীতির শিকার হয়েছিল। সামরিক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি খুব বেশি ছিল শুধুমাত্র ব্রিটিশ সেনাবাহিনীরাই বেশি সাহায্য পেতো আর ভারতীয় দেশীয় সেনাবাহিনীরা কম সাহায্য পেতো।
সমুদ্র পাড়ি দিতে বাধ্য করা:
দেশীয় সেনাবাহিনীদের সমুদ্রে পাড়ি দিতে বাধ্য করা হতো।
উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ:
দেশীয় সেনাবাহিনীদের উপর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতো ব্রিটিশ বাহিনীরা।
৫. ধর্মীয় কারণ
সতীদাহপ্রথা এবং গঙ্গাসাগর সন্তান বিসর্জন প্রথা রদ, শিশুহত্যা নিবারণ, বিধবাবিবাহ প্রচলন ইত্যাদিতে ইংরেজদের ইতিবাচক ভূমিকা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতবাসী যথেষ্ঠ অসন্তুষ্ট হয়।
বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর কর চাপানো হলে ভারতবাসী ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগে। বিভিন্ন মদির ও মসজিদের জমির ওপর নির্ভরশীল হিন্দু-মুসলিম পরিবারগুলি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে আসার সঙ্গে সঙ্গে খীষ্টান ধর্মের প্রচারকরাও ভারতে এসেছিল। তারা বিশেষ করে ভারতীয় নিম্নবর্ণের মধ্যে খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার এবং তা গ্রহণের করার দিকে জোর দিয়ে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করে। এটিকে মহাবিদ্রোহের একটি কারণ হিসাবে গণ্য করা হয়।
লাখেরাজ বাতিলকরণ:
মহাবিদ্রোহী লাখেরাজ বাতিলকরণ হয়েছিল।
সতীদাহ প্রথা বিলোপ:
যদিও সতীদাহ প্রথার বিলুপ্ত করার পিছনে বাংলার নবজাগরণের জনক বা পথিকৃৎ রাজা রাম মোহন রায়ের ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তাহলেও1829 সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক আইন করে সতীদাহ প্রথা পুরোপুরি বিলুপ্ত করে। যে কারনে বেশ কিছু হিন্দু সমাজ লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক -র সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত আইন ভালো চোখে নেয়নি।
বলিদান নিষিদ্ধকরণ:
ব্রিটিশরা ভারতের বিভিন্ন ধর্মে প্রচলিত ধার্মিক বলিদান রীতিকে নিষিদ্ধকরণ করে। যা ভারতের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের উপর ধার্মিক আঘাত হেনেছিল।
(ii) প্রত্যক্ষ কারণ
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেল নামে এক রাইফেলের প্রচলন ছিল। এতে ব্যবহৃত কার্তুজ বা টোটার খোলসটি দাঁত দিয়ে কেটে রাইফেলে ভরতে হত।
সেনাবাহিনীতে গুজব ছড়ায় যে, খোলসটি গরু ও শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। ফলে হিন্দু ও মুসলিম সিপাহীরা ধর্মচ্যুত হবার ভয়ে এই টোটো ব্যবহার করতে চায় না এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এটাই ছিল মহা বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ।
মহাবিদ্রোহের ফলাফল:
মহাবিদ্রোহের কারণ যেমন অসংখ্য ছিল ফলাফল অসংখ্য রয়েছে। ফলাফল বলতে এখানে মহাবিদ্রোহের ফলে কি কি হয়েছে। মহাবিদ্রোহের ফলাফল গুলি হল:-
১. কোম্পানির শাসনের অবসান:
১৮৫৮-এর ২রা আগস্ট ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘Government of India Act পাশ করে। এই আইনের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তথা মহারাণি ভিক্টোরিয়ার হস্তে অর্পণ করা হয়।
২. শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন:
১৮৫৮ এর ২রা আগস্ট অ্যাক্ট ফর দি বেটার গভর্মেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ অনুসারে ১৫ জন সদস্য নিয়ে ‘Board of Directors’ গঠিত হয় ।ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার একজন মন্ত্রীকে এই সভার ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত অধ্যক্ষ করা হয়। তিনি ভারতসচিব নামে অভিহিত হন এবং তিন ব্রিটেন ও ভারতের শাসনতন্ত্রের যােগসূত্র।
এখন থেকে ভারতের গভর্ণর জেনারেল ভাইসরয়ের পদে উন্নীত হন। ইংলন্ডের রাণির নামে তিনিই ভারত শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
৩. সামরিক সংস্কার:
মহাবিদ্রোহের ফলে সামরিক বিভাগকে আরও শক্তিশালী করা হয়। সৈন্যবাহিনীতে ব্রিটিশ সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
ভারতীয় সৈনিকদের ব্রিটিশ সৈন্যের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। যে সকল জাতির সৈন্য মহাবিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল তাদের মধ্যে থেকে সৈন্য নিয়ােগ বন্ধ করা হয়।
৪. রাজনীতিতে পরিবর্তন:
মহাবিদ্রোহের আগে দেশীয় রাজ্যগুলি রক্ষার অজুহাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভুক্ত করা হয়েছিল। এখন থেকে দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি নেওয়া হয় ,যাতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য দীর্ঘ স্থায়ী হয়।
৫. সামাজিক পরিবর্তন:
মহাবিদ্রোহ ভারতের সামাজিক ক্ষেত্রে ও কিছু পরিবর্তন ঘটায়। পাশ্চাত্য দর্শন, বিজ্ঞান ও সাহিত্যের স্পর্শে আমাদের সমাজ আধুনিক হয়ে উঠতে শুরু করে। হিন্দুরা পাশ্চাত্য প্রভাবে আধুনিক হয়ে উঠলে ও মুসলমানরা পাশ্চাত্য প্রভাব থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে।
৬. মহারানি ভিক্টোরিয়ার ঘোষণা:
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়া ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং নিজের হাতে তুলে নেন ভারতের শাসনভার। তার প্রতিনিধিরূপে ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং আনুষ্ঠানিকভাবে যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন তা ‘মহারানীর ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।
মহারানীর ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে –
- (ক) লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক প্রবর্তিত স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল করা হবে এবং দেশীয় রাজ্যের রাজারা দত্তক পুত্র গ্রহণ করতে পারবেন।
- (খ) এখন থেকে ভারতের শাসনভার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে মহারানি নিজের হাতে নিলেন।
- (গ) ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সন্ধিগুলি মেনে চলবে।
- (ঘ) দেশীয় রাজাদের রাজ্যে মহারানির সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
- (ঙ) ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না।
- (চ) ব্রিটিশরা ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তার করবে না।
- (ছ) জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ভারতবাসীসরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে।
- (জ) বিদ্রোহে প্রত্যক্ষ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ছাড়া আর সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে ইত্যাদি।
উপসংহার:
উপরে উল্লেখিত মহাবিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে । আমরা এখানে মূলত সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহের মূল কারণ ও ফলাফল আলোচনা করেছি। ভারতের স্বাধীনতার ১০০ বছর আগের এই বিদ্রোহ ব্রিটিশদের স্তম্ভকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বিদ্রোহের পর থেকে ব্রিটিশরা ভারতবাসীর জন্য অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করে তারা মূলত উচ্চ পদস্থ কোন পদে কোন ভারতীয়দের নিয়োগ করা থেকে বিরত থাকে।
FAQs মহাবিদ্রোহ
প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহের সময় ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: মহাবিদ্রোহের সময় পামস্টার্ন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহের দুজন নেতার নাম?
উত্তর: সিপাহী বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম হল ঝাঁসি রানী লক্ষ্মীবাই ও মঙ্গল পান্ডে।
প্রশ্ন: মহাবিদ্রোহের পর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন কে?
উত্তর: মহাবিদ্রোহের পর ভারতের শাসনভার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে হস্তান্তর করে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের হাতে চলে যায়।