মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সময়ে কোষাগার ছিল পূর্ণ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজ করছিল, স্থাপত্য শিল্প চরম সীমায় পৌঁছে ছিল, তা স্বত্বেও আমরা শাহজাহানের রাজত্বকাল কি ভারতে মুঘল শাসনের সুবর্ণযুগ বলতে পারি?
আমরা এই আর্টিকেলতে শাহজাহানের সময় কালে তার সাম্রাজ্যে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাকে দৃষ্টিপাত করবো আর এই দৃষ্টিপাতের মধ্যে আমরা উপনীত হতে পারবো যে শাহজাহানের রাজত্বকালকে স্বর্ণ বলা যায় কিনা।
শাহজাহানের রাজত্বকাল কি ভারতে মুঘল শাসনের সুবর্ণযুগ?
বেশির ভাগ এশিয়ান ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকাল কেবল মাত্র মুঘল সাম্রাজ্যের নয় বরঞ্চ সমগ্র মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাসের স্বর্ণযুগ ছিল। তবে এই পসঙ্গে অনেক ঐতিহাসিক ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।
এই সমস্ত ঐতিহাসিকদের মধ্যে বেশির ভাগ হল ইউরোপীয় ঐতিহাসিক। এদের মতে শাহজাহান উত্তরাধিকারী সূত্রে তিনি তার পিতামাতার কাছ থেকে বিপুল সম্পত্তি লাভ করেছিলেন, পারস্যে স্থিতিশীল সাম্রাজ্য বজায় থাকার কারনে পশ্চিমা দেশগুলির সাথে বাণিজ্য করার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরী হয়েছিল।
তবু শাহজাহান তার ব্যক্তিগত শখকে পূরণ করার জন্য তিনি তার কোষাগারকে খালি করেছিলেন এবং কৃষক এবং শ্রমিকদের উপর ভারী কর আরোপ করেছিলেন, যার ক্ষতিকারক প্রভাব তার পরবর্তী প্রজন্মের উপর পড়েছিল এবং তার সময়ে মোগল সামরিক শক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করেছিল।
রাজত্বকাল | 1628-1658 |
স্থাপত্য | শাহজাহান তাজমহল এবং লাল কেল্লা সহ মহৎ মুঘল স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। |
তাজ মহল | শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের সমাধি হিসেবে নির্মিত, যেটি ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। |
লালকেল্লা | বিস্তৃত দুর্গটি শাহজাহানের বাসস্থান, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রাসাদ এবং বাগান ছিল। |
ময়ূর সিংহাসন | রত্ন দ্বারা সজ্জিত শাহজাহানের বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন। |
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি | ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করে, রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে সাম্রাজ্যটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করে। |
সাহিত্য | শাহজাহানের শাসনামলে ফার্সি কবিতা ও সাহিত্যের উন্নতি ঘটে । |
শৈল্পিক পৃষ্ঠপোষকতা | চিত্র শিল্পে, লিপিবিদ্যা এবং ক্ষুদ্র শিল্প সহ বিভিন্ন শিল্পে সম্রাট মনোনিবেশ করেছিলেন। |
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা | শাহজাহান একটি স্থিতিশীল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠান করেছিল। |
সামরিক শক্তি | শাহজাহানের অধীনে মুঘল সেনাবাহিনী সাফল্য অর্জন করেছিল। |
🔥আরও পড়ুনঃ-
শাহজাহানের গুণাবলী (শাজাহানের রাজত্বকাল, ১৬২৭-৫৮ খ্রীঃ)
শাজাহানের রাজত্বকাল, যা মোটামুটিভাবে ত্রিশবৎসরব্যাপী (১৬২৭-৫৮ খ্রীঃ) বিস্তৃত ছিল, তাকে সাধারণতঃ মুঘল শাসনের সুবর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। শাজাহানের চরিত্রে কর্মপ্রচেষ্টা, উদ্যম, বুদ্ধিমত্তা, বাস্তববোধ ও স্নেহপ্রবণতা প্রভৃতি গুণের সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়।
তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, এবং প্রখর বাস্তববোধের ফলে তিনি নূরজাহানের চেষ্টা ও দুরভিসন্ধিকে ব্যর্থ করে সিংহাসন দখল করতে সমর্থ হয়েছিলেন। আদর্শ পিতা এবং স্বামী হিসাবে তাঁর হৃদয়ে স্নেহ-মমতার অন্ত ছিল না। শাজাহান বিদ্বান্ ও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। আরবী, ফার্সী ও হিন্দী ভাষায় তাঁর যথেষ্ট বুৎপত্তি ছিল।
শিক্ষার প্রসারকল্পে তিনি বহু মাদ্রাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মের দিক হতে তিনি ছিলেন গোঁড়া সুন্নী মুসলমান। ব্যক্তিগতভাবে তিনি যদিও হিন্দু বিদ্বেষী ছিলেন না তবুও সময় সময় তাঁর আচার-আচরণের মধ্যে ধর্মান্ধতা প্রকাশ পেত। তাঁর রাজসভায় বহু হিন্দু কবি, দার্শনিক ও জ্যোতির্বিদ সমাদৃত হয়েছিলেন।
তাঁর বিভিন্ন সদ্গুণের জন্য আব্দুল হামিদ লাহোরি ও কাফি খাঁ প্রমুখ সমসাময়িক ঐতিহাসিকগণ এবং এলফিনস্টোন প্রমুখ ইউরোপীয় ঐতিহাসিকগণ বাদশাহর যথেষ্ট প্রশংসাও করেছেন। বিভিন্ন দিক্ থেকে আলোচনা করে একথা বলা যায় যে, শাজাহানের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য গৌরবের চরম শিখরে উন্নীত হয়েছিল।
বাহ্যতঃ শান্তি ও সমৃদ্ধির সময়কাল
শাজাহানের রাজত্বকালকে বাহ্যিক দিক থেকে বিচার করলে শান্তি ও সমৃদ্ধির সময়কাল বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হলেও মুঘল সাম্রাজ্য দাক্ষিণাত্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তারলাভ করতে পারে নি।
শাহজাহানই সর্বপ্রথম দাক্ষিণাত্যের বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা রাজ্য দুটির ওপর মুঘল প্রভাব সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন এবং তাঁর আমলেই আম্মদনগর মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল।
শাৰ্জাহান হুগলীতে অবস্থিত পর্তুগীজদের ঔদ্ধত্য এবং ক্ষমতা বিনষ্ট করেন। পূর্ব ভারতে আসামের অহোমদের পরাজিত করলে কামরূপের পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত মুঘল অধিকার বিস্তারলাভ করে। কিন্তু তিনি এশিয়ার বল্খ ও বদখশান দখল করতে ব্যর্থ হন।
বহির্বাণিজ্যের বিস্তার লাভ: স্থাপত্যের অভূতপূর্ব বিকাশ
শাহ্তাহানের রাজত্বকালে ভারতের বহির্বাণিজ্য বিশেষভাবে বিস্তারলাভ করে। স্থলপথে পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যসূত্রে ভারতে প্রচুর অর্থ আমদানি হত। এই অর্থই শাজাহান ব্যয় করেন তাঁর রাজধানী ও অন্যান্য শহরকে সুষমামণ্ডিত করে তুলতে। শাজাহান ছিলেন স্থাপত্য ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক।
তাঁর সময়ে মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময়কর বিকাশ ঘটে। এই সময়ে নির্মিত সৌধগুলিতে মুঘল স্থাপত্যরীতি ও নির্মাণকুশলতার চরম উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। শাজাহানের রাজত্বকালে সর্বপ্রথম সৌধগুলিতে শ্বেতপাথর ব্যবহৃত হয় এবং এতে ইন্দো-পারসিক স্থাপত্যরীতির ছাপ লক্ষ্য করা যায়।
শাহজাহানের উদ্যোগে আগ্রা, দিল্লী, লাহোর, কাবুল, কাশ্মীর প্রভৃতি স্থানে বহু সুরম্য প্রাসাদ, দুর্গ ও মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। দিল্লীকে নতুন করে সুসজ্জিত করে তার নামকরণ করা হয় শাহজাহানাবাদ। শাহজাহানাবাদের দেওয়ানই-আম, দেওয়ান-ই-খাস, জাম-ই-মসজিদ ও আগ্রার মতি মসজিদ স্থাপত্য-সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন।
মণিমুক্তাখচিত বিশ্ব বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন শাহজাহানের আড়ম্বরপ্রিয়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আট কোটি টাকা ব্যয়ে এই সিংহাসনটি নির্মিত হয়েছিল। তাঁর সময়ের স্থাপত্যকীর্তির সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল তাজমহল। বহু দেশী ও বিদেশী স্থাপত্য শিল্পীর সহযোগিতায় তাজমহল নির্মিত হয়েছিল।
আবদুর হামিদ লাহোরীর মতে, পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বার বৎসরে এই বিশাল মর্মর সৌধটির নির্মাণকার্য শেষ হয়। ফরাসী পর্যটক টেভার্নিয়ার-এর মতে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে বাইশ বৎসরে এই সমাধি সৌধটি নির্মিত হয়। এই সময়ে চিত্রশিল্পেরও যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল।
আকবরের সময়কালে প্রচলিত চিত্রাঙ্কন রীতি শাজাহানের রাজত্বকালে বর্জিত হয় এবং একটি নতুন চিত্রাঙ্কন রীতি প্রবর্তিত হয়। স্বল্প রং এবং তুলির প্রয়োগ এই নতুন রীতির প্রেধান বৈশিষ্ট্য।
এই সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী সমরকন্দি শাহজাহানের রাজসভা অলঙ্কৃত করেছিলেন। শাহজাহানের রাজত্বকালে চিত্রশিল্পের উন্নতি ঘটলেও কোন কোন সমালোচক মনে করেন যে, তাতে রুচি ও মৌলিকতার যথেষ্ট অভাব ছিল।
সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা অবিঘ্নিত
শাহ্তাহানের শাসনব্যবস্থার দক্ষতা সম্পর্কে দেশী ও বিদেশী ঐতিহাসিকগণ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁর রাজত্বকালে কোন বহিঃশত্রুর আক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করে নি।
বহু ঐতিহাসিকই এই কারণে মনে করেন যে শাজাহানের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য শক্তি ও আড়ম্বরের চরম শিখরে উন্নীত হয়েছিল (“It can hardly be disputed that his reign marks the climax of the Mughal dynasty and empire.”—V. Smith) ।
কিন্তু আপাতঃ শান্তি, সমৃদ্ধি ও জাঁকজমকের অন্তরালে মুঘল সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা অস্পষ্টভাবে দেখা দিতে থাকে।
টমাস রো, টেরী বার্নিয়ের প্রমুখ সমসাময়িক বৈদেশিক পর্যটকগণ এবং আধুনিক ঐতিহাসিকদের মতে, শাহজাহানের রাজত্বকালেই রাজনৈতিক ও সামাজিক দিগন্তে বিপর্যয়ের কৃষ্ণবর্ণ মেঘ ঘনীভূত হতে আরম্ভ করে (“There were shadows in the picture which were ignored by the court annalists.”—Vincent Smith)
শাহজাহানের বৈদেশিক নীতির ব্যর্থতা
প্রথমত, দাক্ষিণাত্যে শাহজাহানের সাম্রাজ্য বিস্তার-নীতি সাফল্যমণ্ডিত হলেও বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হন। শাহজাহানের মধ্য এশিয়া নীতির ফলে মধ্য এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের যুদ্ধে মুঘল সাম্রাজ্যকে প্রভূত ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছিল।
শাহজাহান ১৬৪৯, ১৬৫২ ও ১৬৫৩ খ্রীষ্টাব্দে পর পর তিনবার কান্দাহার অভিযান করেন, কিন্তু পারস্যের বাদশাহের হাত থেকে কান্দাহার পুনরুদ্ধার করতে তিনি অসমর্থ হন। কান্দাহার অধিকারে ব্যর্থতার ফলে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছিল এবং সামরিক দক্ষতায় প্রচণ্ড আঘাত পড়েছিল।
বহু অর্থব্যয় ও সৈন্যসামন্ত দিয়ে শাহ্তৰ্জাহান মধ্য এশিয়ায় বল্খ ও বদখশান জয়ের জন্য অভিযান পাঠান। কিন্তু এই অভিযানটিও শোচনীয়রূপে ব্যর্থ হয়। মুঘল সামরিক অভিযানের ব্যর্থতার ফলে মুঘল সাম্রাজ্য বৈদেশিক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছিল।
মারাঠা শক্তির উদ্ভব
দ্বিতীয়ত, শাহ্তর্জাহানের রাজত্বকালের শেষভাগে ভারতের রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে মারাঠাদের আবির্ভাব ঘটেছিল। আহম্মদনগরের অবলুপ্তি, বিজাপুর ও গোলকুণ্ডার দুর্বলতার সুযোগে দাক্ষিণাত্যে মারাঠা শক্তির অভ্যুদয় ঘটে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মারাঠাদের আবির্ভাব মুঘল সাম্রাজ্যের বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শাজাহানের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিহীনতা মারাঠা শক্তির দ্রুত উত্থানের বিশেষ সহায়ক হয়।
মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতির অবসান
তৃতীয়ত, শাজাহানের শাসনব্যবস্থা মোটেই উদার ছিল না। তিনি শাসনক্ষেত্রে কোন উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেন নি। হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ, স্বেচ্ছাচারিতা, আড়ম্বরপ্রিয়তা, বিলাসপ্রিয়তা ও যুদ্ধবিগ্রহের ফলে সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়বার উপক্রম হয়।
সর্বশেষে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সুন্নী মতবাদ ভিন্ন অপরাপর ধর্মমতের প্রতি শাহজাহানের বিদ্বেষী মনোভাবের ফলে আকবর-প্রবর্তিত মুঘল সাম্রাজ্যের সংহতি বিনষ্ট হয়। তিনি আকবরের প্রবর্তিত সমদর্শী ও ধর্মসমন্বয় নীতি থেকে বিচ্যুত হন।
শাজাহানের পরবর্তী বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকালে যে ধর্মান্ধতা ও অসহিষ্ণুতার চরম প্রকাশ ঘটে তার সূত্রপাত শাহজাহানের রাজত্বকালেই আরম্ভ হয়। ধনসম্পদ ও বাহ্যিক আড়ম্বরের প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আকর্ষণের ফলে কৃষক ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
প্রদীপের নীচেই যেমন অন্ধকার, তেমনি শাহজাহানের জাঁকজমক ও বিলাসিতার অন্তরালে দরিদ্র প্রজাদের দুর্বিষহ জীবন সাম্রাজ্যের ভিত্তিভূমিকেই দুর্বল করে দেয়।
বার্নিয়ের-এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে, প্রাদেশিক শাসকদের অপশাসনের জন্য দরিদ্র কৃষিজীবী ও কারিগর-শিল্পীদের অবস্থা চরমে এসে পৌঁছায় (The misrule of the provincial governors “often deprived the peasant and artisan of the necessaries of life.” – Bernier) ।
১৬৩০-৩২ খ্রীষ্টাব্দে সমগ্র দাক্ষিণাত্যে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মুঘল সরকার দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষদের কষ্টলাঘবের জন্য প্রায় কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করে নি।
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, শাহজাহানের রাজত্বকালে মুঘল সাম্রাজ্য একদিকে যেমন গৌরবের চরম শিখরে উন্নীত হয়েছিল তেমনি ঐ সময় হতে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের সূত্রপাত ঘটেছিল। শাহজাহানের রাজত্বকালকে ফ্রান্সের জাঁকজমকপ্রিয় মহান রাজা চতুর্দশ লুই-এর রাজত্বকালের সঙ্গে এই কারণে তুলনা করা হয়ে থাকে।
উপসংহার
উপরে উপরিলিখিত “শাহজাহানের রাজত্বকাল কি ভারতে মুঘল শাসনের সুবর্ণযুগ” বলা যায়, এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি যে এই সময় অনেক দিক দিয়ে যেমন শাহজাহানের রাজত্বকালে কোনো বড় বিদ্রহ হয়নি, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এই সময় স্থিতাবস্তা বিরাজ করেছিল, কৃষির উন্নতির জন্য নানা রকম পরিকল্পনা করা হয়েছিল, শিল্পে ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছিল।
অপর দিকে শাহজাহানের স্বেচ্ছাচারিতা, শখ পূরণ ও বিলাস-ব্যসনের ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকে। এর প্রভাব খারাব প্রভাব শাহজাহানের পরবর্তী প্রজন্মের উপর পরে এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
FAQs সম্রাট শাহজাহান
প্রশ্ন: সম্রাট শাহজাহানের কতজন স্ত্রী ছিল?
উত্তর: সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী সংখ্যা তিন।
প্রশ্ন: শাহজাহানের কতজন পুত্র ছিল?
উত্তর: সম্রাট শাহজাহানের সন্তান সংখ্যা চার।
প্রশ্ন: সম্রাট শাহজাহানের মৃত্যু কিভাবে হয়?
উত্তর: সম্রাট শাহজাহানের মৃত্যু ১৬৬৬ সালে আগ্রা ফোর্টে পুত্র আওরঙ্গজেব হাতে বন্দী অবস্থায় হয়।
প্রশ্ন: শাহজাহানের পূর্ব নাম কি ছিল?
উত্তর: শাহজাহানের পূর্ব নাম কি ছিল খুররম, পিতা জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর 1628 সালে সিংহাসনে আরোহণ কালে তিনি শাহজাহান উপাধি গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন: ময়ূর সিংহাসন কে নির্মাণ করেন?
উত্তর: সম্রাট শাহজাহান ময়ূর সিংহাসন নির্মাণ করেন ।