শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো । Shivaji Administration in Bengali

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
1.5/5 - (2 votes)

আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করবো। শিবাজী মহারাজ একজন সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ সেনাপতি, ও শাসক হিসাবে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। মারাঠা রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অপরিসীম। তার জীবনের প্রায় সময় যুদ্বের মধ্যে কাটাতে হয়েছে, বিশেষ করে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

শিবাজীর মূল আদর্শ গণতন্ত্র হলেও তিনি ছিলেন স্বৈরাচারে বিশ্বাসী। তিনি তার প্রশাসন ব্যাবস্থাকে সঠিক ভাবে চালনা করার জন্য তার প্রশাসন ব্যাবস্থায় প্রচুর পরিবর্তনএনেছিল। যদিও তার রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতার মালিক তিনি নিজেই ছিলেন। নিচে শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হল।

শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করো

শিবাজী একজন মহান বিজয়ী এবং একজন দক্ষ প্রশাসক হিসাবে ইতিহাসে এখন স্থান দখল করে আছে। তার শাসন ব্যবস্থা মধ্যযুগীয় শাসকদের মতো ছিল। তার হাতে সাম্রাজ্যের পূর্ণ অধিকার ন্যস্ত ছিল। শিবাজীর প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দক্ষিণ ভারতের কিছু রাজ্য এবং মুঘল প্রশাসন দ্বারা প্রভাবিত ছিল।

শিবাজীর প্রশাসনিক ব্যবস্থা যাতে সুষ্ট ভাবে সম্পূর্ণ হতে পারে তার জন্য তিনি ‘অষ্টপ্রধান’ নামে একটি মন্ত্রী পরিষদের গঠন করেন। তবে এটিকে মন্ত্রী পরিষদ বলা সমীচীন হবে না, কারণ এই মন্ত্রীরা কেবল মাত্র ‘সচিব’ হিসেবে শিবাজীর রাজসভায় কাজ করতেন।

এরা সরাসরি কোন রকম সিদ্ধান্ত বা নীতি নির্ধারণ করতে পারত না। এই মন্ত্রীরা শিবাজিকে কেবল মাত্র প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে উপদেশ দিতে পারতো। তবে প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের পরামর্শ নিতে শিবাজী বাধ্য ছিলেন না।

নাম শিবাজী ভোসলে
ছদ্মনাম ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ
রাজত্ব 1674-1680
বংশের নাম ভোসলে রাজবংশ
রাজধানী রায়গড় দুর্গ, রাজগড়ে, সিংহগড়ে
প্রতিষ্ঠিত দুর্গের নাম প্রতাপগড়, সিন্ধুদুর্গ, রাজগড় ইত্যাদি।
ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার নাম রয়তওয়ারী
আইনি কোড“শিবধর্ম” নামে পরিচিত।
সামরিক কৌশল গেরিলা “গনিমি কাভা”

🔥আরও পড়ুন:

👉 মারাঠা শক্তির উত্থানে তিন পেশওয়ার ভূমিকা কি ছিল?

সুদক্ষ শাসক স্বৈরতান্ত্রিক কিন্তু প্রজা মঙ্গলকামী

শিবাজী যে কেবলমাত্র দুঃসাহসী বীর ও সমরকুশলী সেনাপতি ছিলেন তাহাই নয়, তিনি একজন অসাধারণ সংগঠক ও সুদক্ষ শাসকও ছিলেন। তাঁহার অধিকৃত রাজ্যে একটি সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করিয়া তিনি তাহার পরিচয় দিয়া গিয়াছেন। তিনি স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী হইলেও স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না, প্রজা সাধারণের মঙ্গল সাধনই তাঁহার শাসনব্যবস্থার মূল নীতি ছিল।

“Like nearly all great warriors-Napoleon is a conspicuous example-Shivaji was also a great administrator, for the qualities which go to make a capable general are those which are required by the successful organiser and statesman.”-Rawlinson.

অষ্টপ্রধান ব্যবস্থা কি?

তাঁহার প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চে ছিলেন রাজা, কিন্তু রাজা ‘অষ্ট প্রধান’ বা আটজন মন্ত্রীর পরামর্শক্রমে শাসনকার্য পরিচালনা করিতেন । তাঁহারা ছিলেন (১) ‘পেশোয়া‘ বা প্রধান মন্ত্রী, (২) ‘অমাত্য’ বা রাজস্ব মন্ত্রী, (৩) ‘মন্ত্রী’ বা ওয়াকিয়ানবীশ, (৪) ‘সামন্ত’ বা পররাষ্ট্র মন্ত্রী, (৫) ‘সচিব’ বা সরকারী পত্রাদি প্রেরণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী, (৬) ‘পণ্ডিতরাও’ বা ধর্মাধ্যক্ষ, (৭) ‘ন্যায়াধীশ’ বা প্রধান বিচারপতি, এবং (৮) ‘সেনাপতি’ বা সামরিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী। একমাত্র ‘পণ্ডিতরাও’ এবং ‘ন্যায়াধীশ’ ছাড়া অপর সকল মন্ত্রীকেই প্রয়োজন মত সামরিক কার্যে অংশ গ্রহণ করিতে হইত।

যোগ্যতানুসারে কর্মচারী নিয়োগ স্বরাজ প্রান্ত      

রাজকর্মচারী পদ পূর্বে অনেক ক্ষেত্রে বংশানুক্রমিক ছিল; কিন্তু শিবাজী এই ব্যবস্থার বদলে যোগ্যতানুসারে কর্মচারী নিয়োগের রীতি প্রবর্তন করিলেন। সুতরাং ধীরে ধীরে জায়গীর প্রথাও বিলুপ্ত হইয়া গেল । শিবাজী কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে শাসিত অঞ্চল সমূহ ‘স্বরাজ’ নামে অভিহিত হইত ৷

স্বরাজ তিনটি প্রদেশ বা ‘প্রান্তে’ বিভক্ত ছিল। রাজা কর্তৃক নিযুক্ত রাজপ্রতিনিধিগণ প্রান্তের শাসনকার্য পরিচালনা করিতেন। এখানেই আটজন রাজকর্মচারীর একটি সভা তাঁহাকে পরামর্শ দান করিত। প্রান্তগুলি ছিল পরগণা ও গ্রামে বিভক্ত।

গ্রাম পঞ্চায়েৎ দেশপাণ্ডে দেশ মুখ

গ্রামের শাসনভার সাধারণতঃ গ্রামপঞ্চায়েৎ-এর উপরই ন্যস্ত থাকিত। কয়েকটি গ্রামের শাসনকার্য পরিদর্শনের জন্য ‘দেশপাণ্ডে’ ও ‘দেশমুখ’ নামক কর্মচারীগণ নিযুক্ত থাকিতেন। স্বরাজের বহির্ভূত অঞ্চল সমূহকে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত না করিয়া শিবাজী ঐ সমস্ত স্থান হইতে কেবল কর আদায় করিতেন।

রাজস্ব-নীতি

আহম্মদনগরের মন্ত্রী মালিক অম্বরের রাজস্বনীতি যথাসম্ভব অনুসরণ করিয়া শিবাজী একটি সুষ্ঠু রাজস্বনীতি গ্রহণ করেন। তিনি রাজ্যের সমস্ত জমি জরিপ করাইয়া উৎপন্ন ফসলের ১/২ অংশ সরকারী রাজস্বরূপে ধার্য করিয়া দিলেন। ইহার ফলে প্রজাদের দেয় রাজস্ব নির্দিষ্ট হইয়া গেল এবং সরাসরি তাহাদের নিকট হইতে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা হইল ।

নির্ধারিত নির্দিষ্ট রাজস্ব

প্রজাগণ শস্য দ্বারা বা নগদ অর্থে রাজস্ব জমা দিতে পারিত, প্রয়োজনে রাজকোষ হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে পারিত। রাজস্ব আদায়ের ব্যপারে শিবাজী যেমন কোনরূপ শিথিলতা সহ্য করিতেন না তেমনি প্রজা সাধারণের উপর কোন প্রকার উৎপীড়নও বরদাস্ত করিতেন না।

চৌথ ও সরদেশমুখী কি?

স্বরাজ অঞ্চল হইতে রাজস্ব আদায় ছাড়া শিবাজী পার্শ্ববর্তী কয়েকটি স্থান হইতে ‘চৌথ’ ( অর্থাৎ ফসলের এক চতুর্থাংশ ) এবং ‘সরদেশমুখী” (আরও এক দশমাংশ) আদায় করিতেন। প্রতিবেশী অঞ্চল সমূহকে মারাঠা আক্রমণ ও লুণ্ঠন হইতে রক্ষা পাইবার জন্য এই কর প্রদান করিতে হইত। যাহাই হোক, এই দুইটি করের মূল প্রকৃতি সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে মতভেদ আছে।

“It was not a mere military contribution without any moral or legal obligations, but a payment in lieu of protection against the invasion of a third power.” Ranade.

“The payment of the Chauth merely saved a place from the Maratha soldiers.”-Sir Jadunath Sarkar.

শিবাজীর রাজস্ব নীতির সমালোচনা

অনেকে শিবাজীর রাজস্ব নীতির নিন্দা করিয়াছেন এবং তাঁহার প্রবর্তিত ব্যবস্থাকে উৎপীড়নমূলক বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন। “The great fish prey on the little and even Bijapur rule was milder than that of Shivaji.”-Fryer. কিন্তু একথা ভুলিলে চলিবে না যে শিবাজী অন্য কোন কর প্রজাদিগের নিকট হইতে আদায় করিতেন না।

তাহা ছাড়া, পর্বত সঙ্কুল অনুর্বর মহারাষ্ট্র দেশে উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ ছিল নিতান্তই কম। অথচ দেশটি ছিল শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত ; শিবাজীকে বাধ্য হইয়া এক বিরাট সৈন্য বাহিনী পোষণ করিতে হইত। শিবাজীর সমগ্র রাজস্ব ব্যবস্থা পর্যালোচনা করিয়া গ্রান্ট ডাফ (Grant Duff) তাঁহাকে প্রজাহিতকর বলিয়াই মত প্রকাশ করিয়াছেন ।

সামরিক সংগঠন স্থায়ী সেনাবাহিনী

শিবাজীর সামরিক প্রতিভা সর্বজনস্বীকৃত। তিনি মাওয়ালী জাতির লোক লইয়া এক দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী গঠন করিয়াছিলেন। শিবাজীর রাজ্যের সীমা বিস্তৃত হইলে তিনি একটি স্থায়ী বেতনভুক সেনা বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী ছিল সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল।

অশ্বারোহী পদাতিক, নৌবাহিনী প্রভৃতি

তাহারা ছিল অশ্বারোহী ও পদাতিক। অশ্বারোহী বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত ছিল—বর্গী ও শিলাদার। বর্গীরা সরকার হইতেই বেতন ও অস্ত্রশস্ত্র পাইত; শিলাদাররা বেতন পাইত কিন্তু অস্ত্রশস্ত্র তাহাদিগকেই সংগ্রহ করিতে হইত। শিবাজী একটি  নৌবাহিনীও গঠন করিয়াছিলেন ।

তাহা ছাড়া, তিনি হস্তীবাহিনী ও উষ্ট্রবাহিনীও গঠন করিয়াছিলেন। নানাদিক দিয়া শিবাজীর দ্বারা গঠিত বাহিনী শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিয়া গিয়াছে । “The Maratha leaders possessed artillery, musketry, bows and arrows, elephants and camels. They were equipped just like the Mughals. Only a few years ago they did not march in this fashion. -Manucci.

উপসংহার

উপরে উল্লেখিত শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা আলোচনা করে বলা যায় তিনি একদিকে ছিলেন যেমন উগ্র বীর তেমনি অন্য দিকে ছিলেন চরিত্রবান এবং মহৎ আদর্শে অনুপ্রাণিত। ধর্মীয় দিক থেকে তিনি ছিলেন সহিষ্ণুতা এবং মানবতার দিক দিয়ে সমসাময়িক রাজাদের চেয়ে ছিলেন উপরে।

কঠোর শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল তাঁহার সেনাবাহিনীর অপর বৈশিষ্ট্য; তাহারা ছিল স্বল্পাহারী ও পরিশ্রমী, গেরিলা যুদ্ধ রীতিতে অভ্যস্ত; শিবাজীর সামরিক শক্তির মূল ভিত্তি ছিল তাঁহার দুর্গগুলি। এগুলি সুরক্ষিত 18 দুর্ভেদ্য করিয়া তোলাই ছিল শিবাজীর অন্যতম কৃতিত্ব।

FAQs শিবাজীর শাসন ব্যবস্থা

প্রশ্ন: শিবাজী তলোয়ারের নাম কি?

উত্তর: শিবাজীর তরবারির নাম যথাক্রমে ভবানী, জগদম্বা, এবং তুলজা।

প্রশ্ন: চৌথ ও সরদেশমুখী কর ব্যবস্থা কে চালু করেন?

উত্তর: মারাঠা শাসক শিবাজী চৌথ ও সরদেশমুখী নামে দুটি কর চালু করে।

প্রশ্ন: শিবাজীর সেনাপতি কে ছিলেন?

উত্তর: শিবাজীর শাসন কালে অনেকগুলি সেনাপতি ছিলেন তাদের মধ্যে বাজি প্রভু দেশপান্ডে, তানাজি মালুসারে, এবং মুরারবাজি দেশপান্ডে উল্লেখযোগ্য।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment