আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো। বাবা আকবর তার ছেলেকে সাধক শেখ সেলিম চিশতীর এর নামে নাম দেন সেলিম, পরে তাকে জাহাঙ্গীর উপাধিতে ভূষিত করা হয় যার অর্থ হল বিশ্বজয়ী। তিনি প্রায় দীর্ঘ ২২ বছর সগর্বে রাজত্ব করে ছিলেন।
তার আমলে কোনো বড় যুদ্ধ বা সাফল্য অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও তিনি তার রাজত্বকে বাংলা পর্যন্ত বিস্তিত করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে নির্মিত গোল্ডেন চেইন অফ জাস্টিস এর জন্য তাকে স্মরণ করা হয়। চলুন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের জীবনী | Biography of Jahangir in Bengali
নাম | জাহাঙ্গীর |
সিংহাসন আরোহন | 24 অক্টোবর 1605 খিষ্টাব্দ |
বংশ | মুঘল |
জন্ম | 31 আগস্ট 1569 খিষ্টাব্দ |
জন্মস্থান | ফতেপুর সিক্রি (আগ্রা) |
পিতার নাম | আকবর |
মায়ের নাম | মরিয়ম-উজ-জামানি (যোধা বাই) |
স্ত্রী | নুরজাহান |
পুত্র | শাহজাহান |
কন্যা | শাহজাদী পারহেজ বানু বেগম |
রাজত্বকাল | 24 অক্টোবর 1605 খিষ্টাব্দ – 7 নভেম্বর 1627 খিষ্টাব্দ |
রাজধানী | আগ্রা (1611 সাল পর্যন্ত), তারপর লাহোর |
মৃত্যু | 28 অক্টোবর 1627 খিষ্টাব্দে |
সমাধিস্থল | শাহদারা বাগ (পাকিস্তানের লাহোরে) |
সিংহাসনে আরোহণ
আকবর মৃত্যুর পূর্বে তাঁহার একমাত্র জীবিত বিদ্রোহী পুত্র সেলিমকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করিয়া গিয়াছিলেন । পিতার মৃত্যুর পর তাঁহাকে সিংহাসন হইতে বঞ্চিত করিবার সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করিয়া সেলিম ১৬০৫ খ্রীষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর উপাধি ধারণ করিয়া সিংহাসনে আরোহণ করিলেন। যে সমস্ত অভিজাত শ্রেণীর ব্যক্তিগণ তাঁহার বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিলেন তিনি তাহাদের ক্ষমা করিলেন।
খুসরভের বিদ্রোহ
কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই তাঁহার পুত্র ধূসরু (বা খুসরভ) বিদ্রোহী হইলে তিনি তাঁহাকে পরাজিত করিয়া বন্দী শিবিরে নিক্ষেপ করেন । তাঁহাকে সাহায্য করিয়া ছিলেন বলিয়া শিখদের পঞ্চম গুরু অর্জুনকে তিনি মৃত্যু দণ্ডে দণ্ডিত করেন। অতঃপর তিনি রাজ্যজয় ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার সাধনে মনোনিবেশ করেন ।
🔥আরও পড়ুনঃ-
নূরজাহানের ভূমিকা (Role of Nurjahan):
নূরজাহানের পূর্ব পরিচয়
সিংহাসনে আরোহণের ছয় বৎসর পর, ১৬১১ খ্রীষ্টাব্দে, জাহাঙ্গীর মেহের উন্নিসা নামক এক মহিলাকে বিবাহ করেন। ইনিই ইতিহাসে নূরজাহান নামে খ্যাত। এই বিবাহের ঐতিহাসিক গুরুত্বও যথেষ্ট। নূরজাহান ছিলেন ইরানী কন্যা এবং শের আফগান নামক বাংলাদেশে জায়গীর প্রাপ্ত জনৈক পারসীক যুবকের স্ত্রী।
জাহাঙ্গীরের সহিত বিবাহ
বাংলাদেশের শাসনকর্তা কুতুবুদ্দীন কোকার সহিত দ্বন্দ্বে শের আফগান নিহত হইলে মেহেরউন্নিসা দিল্লীতে আনীত হন । তাঁহার অসামান্যরূপে মুগ্ধ হইয়া জাহাঙ্গীর তাঁহাকে বিবাহ করিলে তিনি ‘নূরজাহন’ উপাধি ধারণ করেন।
ঐতিহাসিকগণের মতামত
অবশ্য অনেক ঐতিহাসিকের মতে জাহাঙ্গীর পূর্ব হইতেই মেহের উন্নিসার প্রতি অনুরক্ত ছিলেন এবং তাঁহারই ইঙ্গিতে শের আফগান নিহত হইয়াছিলেন । কিন্তু শের আফগানের হত্যর ব্যাপারে জাহাঙ্গীর জড়িত ছিল কিনা সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে ।
নূরজাহানের চরিত্র
নূরজাহান যে কেবলমাত্র অসামান্যা রূপবতী মহিলাই ছিলেন তাহা নহে, জ্ঞানে ও গুণেও তিনি ছিলেন অসামান্যা। বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যেও তাঁহার যেমন দখল ছিল, বুদ্ধিমত্তা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিতেও তিনি ছিলেন তেমনি শ্রেষ্ঠ। উচ্চাকাঙ্খা তাঁহারচরিত্রের অপর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল।
রাষ্ট্রশাসন ব্যাপারে প্রভাব
অল্পকালের মধ্যেই তিনি সম্রাটের উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া রাষ্ট্রব্যাপারে হস্তক্ষেপ করিতে আরম্ভ করেন। শেষদিকে প্রকৃত পক্ষে জাহাঙ্গীরের নামে তিনিই রাজ্যশাসন করিতেন। ঐতিহাসিক স্মিথ তাঁহাকে সিংহাসনের পশ্চাতে শক্তি বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। তিনি ক্রমেই তাঁহার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অধিক সক্রিয় হইয়া উঠেন।
নূরজাহানের উচ্চাকাঙ্খা
তাঁহার ভ্রাতা ও তাঁহার পিতা উভয়েই উচ্চ রাজপদে অধিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। তাঁহার প্রথম বিবাহের কন্যার সহিত জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহরিয়ারের সহিত বিবাহ অনুষ্ঠিত হইল । জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের শেষদিকে এই শাহরিয়ার-এর জন্য সিংহাসন সুরক্ষিত করিতে তিনি অতি মাত্রায় ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন।
সাম্রাজ্যের ক্ষতিসাধন
এই সমস্ত কারণে তিনি শেষদিকে সাম্রাজ্যের যথেষ্ট ক্ষতির কারণ হইয়াছিলেন এবং দরবারে নানা দলগত বিরোধের সৃষ্টি করিয়াছিলেন। রাজ-অন্তঃপুর একটা রাজনৈতিক চক্রান্তের কেন্দ্র হইয়া উঠিয়াছিল।
তাঁহারই চক্রান্তের ফলে প্রথমে শাহ জাহান, পরে বিশ্বস্ত সেনাপতি মহাবৎ খ। বিদ্রোহী হইতে বাধ্য হইয়াছিলেন। এই সমস্ত কারণে তাঁহার ক্ষমতা-প্রিয়তা সাম্রাজ্যের যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করিয়াছিল ।
জাহাঙ্গীরের রাজ্য বিস্তার (Conquests of Jahangir):
বাংলাদেশের স্বাধীন ভূ ইয়াগণের পরিচয়
আকবরের রাজত্বকালে বাংলাদেশে মোগল প্রভুত্ব স্থাপিত হইলেও দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গে প্রতাপাদিত্য রায়, উসমান খাঁ, মুসা খাঁ প্রভৃতি ভূ ইয়াগণ তখনও মোগল প্রভুত্বের বিরোধিতা করিয়া আসিতেছিলেন।
১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ইসলাম খাঁ বাংলার শাসকর্তা নিযুক্ত হইলে তাহাদের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং ১৬১৩ খ্রীষ্টাব্দে সমগ্র বাংলাদেশে মোগল প্রভুত্ব স্থাপিত হয় ।
মেবারের বিরুদ্ধে অভিযান
রাণা প্রতাপ সিংহের পুত্র অমর সিংহের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর তাঁহার রাজত্বের প্রথম বৎসরেই এক অভিযান প্রেরণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহা ব্যর্থ হয়। ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে মহাবৎ খাঁর নেতৃত্বে যে দ্বিতীয় অভিযান প্রেরিত হয় তাহাতে অমর সিংহ পরাজিত হইলেন বটে কিন্তু ব্যতা স্বীকার করিলেন না। ১৬১৩ খ্রীষ্টাব্দে যুবরাজ খুরমের নেতৃত্বে প্রেরিত তৃতীয় অভিযানে অমর সিংহ পরাজিত হইয়া সন্ধি প্রার্থনা করিলেন।
অমর সিংহের সহিত সন্ধির সর্তাদি
এই সন্ধির সর্তানুসারে মেবারের রানা মোগল রাজধানীতে এক হাজার অশ্বারোহী পাঠাইতে স্বীকৃত হইলেন, যুবরাজ খুরগ পাঁচ হাজার সৈন্যের মনসবদার নিযুক্ত হইলেন, কিন্তু মোগল হারেমে মেবারের কোন রাজকন্যা প্রেরণের বাধ্যবাধকতা রহিল না ।
কাংড়া জয় (কান্দাহার সাম্রাজ্য চ্যুত)
রাভি ও শতদ্রুর মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে দুর্ভেদ্য কাংড়া ও নগরকোট রাজ্যটিও মোগল বাহিনী ১৬২০ খ্রীষ্টাব্দে জয় করে। পারস্যরাজ কান্দাহার রাজ্যটি পুনরুদ্ধারের জন্য বরাবরই সচেষ্ট ছিলেন। ১৬০৬ খ্রীষ্টাব্দে কান্দাহারের উপর তাঁহার প্রথম আক্রমণ ব্যর্থ হইয়াছিল।
অবশেষে জাহাঙ্গীরের সহিত বন্ধুত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া পারস্যরাজ শাহ্, আব্বাস ১৬২২ খ্রীষ্টাব্দে অতর্কিতে কান্দাহার আক্রমণ করিয়া উহা অধিকার করিয়া লইলেন; নূরজাহানের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপের ফলে শাহজাহান বিদ্রোহী হইলেন, জাহাঙ্গীর আর কান্দাহারের দিকে মনোনিবেশ করিতে পারিলেন না।
দাক্ষিণাত্যে অভিযান (His Deccan Policy):
আহম্মদ নগরের অবস্থা
আকবরের ন্যায় জাহাঙ্গীর ও দাক্ষিণাত্যে মোগল সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য উদ্যোগী হইয়াছিলেন। আকবরের সময় আহম্মদনগর পরাজিত হইলেও উহার একাংশ তখনও সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিরাজ করিতেছিল; ইহার সুদক্ষ হাবসী মন্ত্রী মালিক অম্বর রাজ্যটিকে মোগল গ্রাস হইতে রক্ষা করিবার জন্য সর্বপ্রকারে চেষ্টা করিতে লাগিলেন।
তিনি গোলকুণ্ডা ও বিজাপুরের সহিত মিত্রতা সূত্রে আবদ্ধ হইয়া ১৬১১ খ্রীষ্টাব্দে মোগল আক্রমণকে প্রতিহত করিয়াছিলেন । অবশ্য ১৬১৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি যুবরাজ খুরমের নিকট পরাজিত হইয়া রাজ্যের যে অংশ পূর্বে আকবরকে দেওয়া হইয়াছিল তাহা প্রত্যর্পণ করিতে স্বীকৃত হইলেন।
আহম্মদ নগরের পরাজয় ও সন্ধি
সুতরাং মোগল সাম্রাজ্য পূর্বে যতদূর বিস্তৃত ছিল তাহা অপেক্ষা আর অধিক বিস্তৃত হইল না । মোগল বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলার সুযোগ লইয়া মালিক অম্বর সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করিলেন, এবং বিজাপুর ও গোলকুণ্ডার সহিত মিলিতভাবে মোগল শক্তির বিরুদ্ধে দণ্ডায়মান হইলেন। কিন্তু তাহারা পুনরায় পরাজিত হইয়া প্রভূত ক্ষতিপূরণ সহ সন্ধি করিতে বাধ্য হইলেন ।
শাহজাহানের বিদ্রোহ ও দাক্ষিণাত্যে শেষ অভিযান
ইহার পর শাহ জাহান বিদ্রোহী হইয়া মালিক অম্বরের সহিত যোগদান করেন এবং উভয়ের সম্মিলিত বাহিনী বুরহানপুর আক্রমণ করে। কিন্তু পরভেজ ও মহাবৎ খাঁর নেতৃত্বে বিরাট মোগল বাহিনী দাক্ষিণাত্যে উপস্থিত হইলে শাহ জাহান ব্যতা স্বীকার করেন; মালিক অম্বরও যুদ্ধ ত্যাগ করেন।
কিছুদিনের মধ্যেই মহাবৎ খাঁ সম্রাটের আদেশে দিল্লী প্রত্যাবর্তন করেন এবং জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যে মোগল প্রাধান্য বিস্তারের আর কোন চেষ্টা হয় নাই। দাক্ষিণাত্যের এই দীর্ঘকাল ব্যাপী যুদ্ধে তথায় মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তার ও প্রতিষ্ঠার বিশেষ কোন অগ্রগতি দেখা যায় নাই ৷
শাসনতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা (Constitutional Measures):
বিচার ব্যবস্থার উন্নতি
জাহাঙ্গীর সিংহাসনে আরোহণ করিয়া যে সমস্ত শাসনতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন করিয়াছিলেন তাহার মধ্যে বিচার-সংক্রান্ত ব্যবস্থাদিই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিচার প্রার্থীদের যাহাতে সুবিধা হয় সেইজন্য তিনি ঘণ্টাযুক্ত ত্রিশ গজ লম্বা একটি সোণার শিকল আগ্রা দুর্গ হইতে যমুনার তীর পর্যন্ত ঝুলাইয়া দিয়াছিলেন।
প্রথম লিপিবন্ধ আইন
তিনি বারটি আইন বা ‘দস্তুর-উল-আমল’ প্রণয়ন করেন এবং উহা লিপিবদ্ধ করিবার ব্যবস্থা করেন। সাম্রাজ্যের সর্বত্র যাহাতে ঐ আইনগুলি সমভাবে পালিত হয় তাহার নির্দেশ দেন। মোগল সাম্রাজ্যে এই প্রথম আইন লিপিবদ্ধ করিবার ব্যবস্থা হইল।
অন্যান্য সংস্কার সাধন
ইহা ছাড়া তিনি কয়েকটি অতিরিক্ত কর উঠাইয়া দেন, কয়েকটি নিষ্ঠুর দণ্ডবিধি রহিত করেন এবং তাঁহার অনুমতি ভিন্ন ম্য প্রস্তুত ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করেন ।
ইউরোপীয়গণের সহিত সম্পর্ক (Relations with Europeans):
পর্তু গীজদের সহিত সম্পর্ক
জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালেই পর্তুগীজ, ডাচ, ইংরাজ প্রভৃতি ইউরোপীয় জাতিসমূহ এদেশের সহিত ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খুব তৎপর হইয়া উঠিয়াছিল; এবং এই উদ্দেশেই জাহাঙ্গীরের সহিত বন্ধুত্ব- পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যত্নবান হইয়াছিল।
পর্তুগীজগণ পূর্ব হইতেই দাক্ষিণাত্যের পশ্চিম উপকূলে নিজেদের বাণিজ্যিক ঘাঁটি গড়িয়া তুলিয়াছিল। সিংহাসনে আরোহণের পর জাহাঙ্গীর তাহাদের সহিত মৈত্রী সম্পর্ক বজায় রাখিবার নীতি গ্রহণ করিয়াছিলেন। হয়ত ইহার পশ্চাতে পর্তুগীজদের নিকট হইতে কামান, বারুদ, প্রভৃতি সংগ্রহ করার রাজনৈতিক উদ্দেশই কাজ করিয়াছিল।
পর্তুগীজদের সহিত বিদ্রোহ
পরে অবস্থা পর্তুগীজদের অতিরিক্ত ঔদ্ধত্য প্রকাশ পাইলে তিনি তাহাদের উপর বিরূপ হন, তাহাদের গীর্জা বন্ধ করিয়া দেন, ঘাঁটি আক্রমণ করেন। কিন্তু যোগলসৈন্য নৌশক্তিতে বলীয়ান না হওয়াতে এ সব বিশেষ ফলপ্রদ হয় নাই ।
বৃটিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী স্যার টমাস রো
এই সময়েই বৃটিশ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীও ভারতে তাহাদের বাণিজ্য প্রসার সাধনে সচেষ্ট হয়। ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ক্যাপটেন হকিন্স (Captain Hawkins), এবং পরে এডোয়ার্ড ইংলণ্ডের রাজা প্রথম জেমস্-এর নিকট হইতে অনুমতি পত্র লইয়া জাহাঙ্গীরের রাজসভায় উপস্থিত হইয়াছিলেন।
কিন্তু পর্তুগীজদের বিরুদ্ধতার ফলে তাঁহারা বিশেষ সুবিধা করিতে পারেন নাই। অতঃপর ১৬২৫ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম জেমস-এর রাষ্ট্রদূত হিসাবে তার টমাস রো (Sir Thomas Roe) জাহাঙ্গীরের রাজসভায় আগমন করেন। তাঁহার অভিজ্ঞতা ও কূটনীতিজ্ঞানের ফলে তিনি ইংরাজ বণিকগণের জন্য বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা আদায় করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন ।
জাহাঙ্গীরের চরিত্র ও কৃতিত্ব (Character and Achievements):
চরিত্র সম্বন্ধে মতবাদ
জাহাঙ্গীরের চরিত্র সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণের মধ্যে কিছুটা মতভেদ আছে । জাহাঙ্গীরের স্ব রচিত ‘আত্মচরিত’ হইতেই তাঁহার চরিত্র সম্বন্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়।
এই ‘আত্মচরিত’ এবং তাঁহার কার্যাবলী হইতে তাঁহার চরিত্রে বহু পরস্পর বিরোধী গুণের সমাবেশ দেখা গিয়াছে। এ কথা সত্য যে তিনি আকবরের ন্যায় বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন না এবং তাহার চরিত্রে বহু দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়।
পরস্পর বিরোধী গুণের সমাবেশ
অনেক ঐতিহাসিকের মতে তিনি ছিলেন অলস ব্যাভিচারী, আরামপ্রিয় ও অত্যাচারী। তবুও তিনি অনেক ক্ষেত্রে বুদ্ধি, কৌশল ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়াছেন। তাহাছাড়া, তিনি ছিলেন শিল্প ও সাহিত্যে অনুরাগী, সৌন্দর্য ও মমত্ববোধে ভরা। পরধর্মসহিষ্ণুতাই ছিল তাঁহার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য কিন্তু তাহার কার্যকলাপের মধ্যে কোন কোন সময় ধর্মোন্মত্ততারও পরিচয় পাওয়া গিয়াছে।
সামরিক প্রতিভা সংস্কারক
সেনাপতি হিসাবে তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন, বেশির ভাগ সামরিক পরিকল্পনা তিনি নিজেই প্রস্তুত করিতেন। অবশ্য সাম্রাজ্য বিস্তারে তিনি বিশেষ কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। কান্দাহার রাজ্যটি তিনি সম্পূর্ণভাবে হারাইয়াছিলেন।
বিভাবের ক্ষেত্রে তিনি নিঃসন্দেহে কিছুটা কৃতিত্ব দেখাইয়াছেন; সকলের পক্ষেই বিচারপ্রার্থী হইবার সুযোগ করিয়া দিয়াছিলেন, বিচারের আইনকে সর্বপ্রথম লিপিবন্ধ করিয়া দিয়াছেন।
সুতরাং এ কথা সত্য যে নানাবিধ সদ্গুণের সহিত তাহার চরিত্রে কিছু দুর্বলতাও মিশিয়াছিল। সেইজন্য অনেক সমসামরিক ঐতিহাসিকগণ তাঁহার মধ্যে পরস্পর বিরোধী গুণাবলীর সংমিশ্রণ দেখিয়াছেন।
“Now for the disposition of that king, it ever seemed unmeto to be composed of extremes; for some times he was barbarously cruel and other times he would seem to be exceedingly fair and gentle.”-Edward Terry
FAQs
প্রশ্ন: সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম সেলিম রাখার কারণ কি?
উত্তর: সম্রাট আকবর সাধক শেখ সেলিম চিশতীর নাম অনুসারে তার ছেলে জাহাঙ্গীরের নাম দেন সেলিম।
প্রশ্ন: সম্রাট জাহাঙ্গীরের মাতার নাম কি?
উত্তর: সম্রাট জাহাঙ্গীরের মাতার নাম জোধাবাই।
প্রশ্ন: সম্রাট জাহাঙ্গীরের কয়টি স্ত্রী ছিল?
উত্তর: সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সংখ্যা ১৭ জন।