জার্মানের কোন আগ্রাসন থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু ?

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
Rate this post

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যে পৃথিবী আবার একটি মহাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি, ধ্বংসলীলা মানুষকে সাময়িক শান্তিকামী করলেও, সমাধান না হওয়া কিছু সমস্যা, ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, পরিবর্তিত পরিস্থিতি, জাত্যাভিমান, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সৃষ্টি করে।


প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিজয়ী শক্তিবর্গের সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি বিশেষতঃ ভার্সাই চুক্তি এই যুদ্ধের জন্য দায়ী ছিল। যুদ্ধোত্তর ইউরোপ বিশেষতঃ জার্মানি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল। সমাধানের পথ হিসাবে উগ্র জাতিয়তাবাদ ও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, যা পরিণামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে।

উগ্রজাতীয়তাবাদ:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বাহিনীর এক অখ্যাত কর্পোরাল এডলফ হিটলার দক্ষতা যোগ্যতা বলে National Socialist German Workers Party বা Nazi দলের নেতায় পরিণত হন।

তারপর সরকার বিরোধী এক ব্যর্থ অভ্যূত্থানের দায়ে কারাবন্দী থাকার সময় তিনি ‘Meinkamf’ (My Struggle) নামে আত্মজীবনি লেখেন। এই গ্রন্থে ব্যাখ্যাত হয়েছে বিভিন্ন তত্ত্ব দর্শন, যাকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে উগ্র জাতীয়তাবাদ।

জাত্যাভিমান জার্মানদের মধ্যে দীর্ঘলালিত হলেওতৃতীয় রাইখ‘-এর ধারণা (১মরাইখ ছিল শার্লাম্যানের পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য), (২য়রাইখ ছিল ১৮৭১১৯১৮ পর্যন্ত প্রথম দ্বিতীয় উইলিয়ামএর সাম্রাজ্য), জার্মানদের উগ্র জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে। (অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, আলসেস প্রভৃতি অঞ্চলের বসবাসকারী জার্মানদের নিয়ে এক বৃহৎ জার্মান সাম্রাজ্য গঠনতৃতীয় রাইখপরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত ছিল)

হিটলারলেবেন গ্রামধ্বনি তুলে জার্মানদের বাসস্থানের জন্য (Room for Germans under the Sun) উপযুক্ত জায়গা এবং সেই জায়গা থেকে অধঃপতিত জাতি ইহুদিদের উৎখাতের কথা বলেন। বর্ণসংকরস্লাভ জাতির সংস্কৃতি মুছে ফেলে, তাদের দেশের (সার্বিয়া, পোল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন) শিল্পকারখানাগুলি জার্মানিতে নিয়ে গিয়ে স্লাভদের কৃষি শ্রমিকে পরিণত করার কথা বলেন।

আরহেরেনভক তত্ত্বে বলেন, জার্মানরা আর্য জাতি। তাদের শরীরেই আছে খাঁটি আর্য (নর্ডিক) রক্ত। সুতরাং পৃথিবীর অন্যান্য বর্ণসংকর জাতিগুলিকে পদদলিত করে শাসন করার অধিকার জার্মানদের আছে।

হিটলারের এই স্বকল্পিতনতুন ব্যবস্থা (New order) ফলে জার্মান জাতীয়তাবাদ উগ্র হয়ে ওঠে। আর নাৎসীবাদ ছিল এই উগ্র জাতীয়তাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত (A spirit of race fanaticism)

ভার্সাই সন্ধির বিরোধীতা:

হিটলার ভার্সাই সন্ধির কেবল বিরোধীই ছিলেন না, এই সন্ধি স্বাক্ষরকারী ভাইমার সমাজতন্ত্রকে উৎখাত করতে জনগণকে আহ্বান জানান। মাইন ক্যাম্ফেহিটলার বলেছেন, ভার্সাই সন্ধির প্রতিটি শর্ত জার্মানির ৬০ মিলিয়ন নরনারীর হৃদয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

তাদের মনে একটি আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে—’আমরা আবার অস্ত্র তুলে নেব।তিনি বলেন, শাশ্বত যুদ্ধেই মানুষ মহান হয়েছে, শাশ্বত শান্তিতেই তার বিনাশ ঘটবে। আরোপিত শান্তি (Peace diktat) জার্মানদের কাছে এভাবে ঘৃণ্য হয়ে ওঠে।

ইতিমধ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে জেনিভায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে (১৯৩২৩৩) খ্রিঃ হিটলার ফ্রান্সের সম পরিমাণ অস্ত্র রাখার দাবী জানিয়ে ব্যর্থ হলে জার্মানি সম্মেলন জাতিসংঘ ত্যাগ করে সামরিকীকরণ শুরু করে। বিশ্বমন্দার জন্য ক্ষতিপুরণ দান বন্ধ করে। হিটলার ভার্সাই সন্ধির ৫নং ধারা অগ্রাহ্য করে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের নীতি চালু করেন।

ইঙ্গজার্মান নৌচুক্তি (১৯৩৫) খ্রিঃ অনুযায়ী ব্রিটিশ নৌশক্তির ৩৫% রাখার অধিকার জার্মানি লাভ করে।জেনারেল স্টাফপদ আবার চালু হয়। গণভোটের মাধ্যমে সার অঞ্চল জার্মানীর সঙ্গে যুক্ত হয়। রাইন অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ ঘটান হয়। এভাবে ভার্সাই সন্ধিকে হিটলার অগ্রাহ্য করেন (১৯৩৭) খ্রিঃ

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉 তৃতীয় বিশ্ব বলতে কি বোঝো? তৃতীয় বিশ্বের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি

অক্ষচুক্তি:

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অতৃপ্ত ইতালি, প্রতিবেশি শত্রু ফ্রান্স, আবিসিনিয়া আক্রমণের বিরোধী ইংল্যান্ডের বিরোধীতার জন্য জার্মানির সঙ্গে রোমবার্লিন অক্ষচুক্তি স্বাক্ষর করে (১৯৩৬) খ্রিঃ।

অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সংগে সীমান্ত বিরোধের সূত্রে কমিউনিষ্ট বিরোধী হিটলারের সঙ্গে জাপান অ্যান্টিকমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষর করে (নভেম্বর, ১৯৩৬ খ্রিঃ) পরে ইতালিও চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে রোমবার্লিনটোকিও অক্ষচুক্তি গড়ে ওঠে (ডিসেম্বর, ১৯৩৬ খ্রিঃ)

অস্ট্রিয়া দখল:

মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষর করে কূটনীতির দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে হিটলার আনরুস (Anschluss) নীতি প্রয়োগে উদ্যোগী হন। আগের ব্যর্থতা কাটিয়ে হিটলার অস্ট্রিয়ার কাছে এক দাবীপত্র পাঠান, বলা বাহুল্য দুর্বল অস্ট্রিয়া তা মেনে নিলে নাৎসীরা অস্ট্রিয়া প্রশাসনের নিয়ন্তা হয়ে ওঠে।

নাৎসীদের সৃষ্ট নৈরাজ্য অবসানের জন্য নাৎসীরা জার্মান বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানায়। এক তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে জার্মানির সঙ্গে অস্ট্রিয়া সংযুক্ত হয় (এপ্রিল, ১৯৩৮খ্রিঃ)

মিউনিখ চুক্তি:

সাম্যবাদে আতংকিত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি (Policy of appeasement) অনুসরণ করছিল।হিটলার তার সুযোগ নেন। প্রতিবেশি চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতান ল্যান্ডের জার্মানরা অত্যাচারিতএই অজুহাতে হিটলার অঞ্চল দাবী করেন। চেকোস্লোভাকিয়া শিল্পে, বিশেষতঃ অস্ত্রশিল্পে উন্নত ছিল।

আর্থিক সামরিক শক্তি যথেষ্ট ছিল। তাই পরিস্থিতি সংঘর্ষের পর্যায়ে পৌঁছলে ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের চাপে মুসোলিনির মধ্যস্থতায় মিউনিখ চুক্তি দ্বারা (১৯৩৮ খ্রিঃ, ২৯ সেপ্টেম্বর) অঞ্চলটি জার্মানি লাভ করে। অল্পকাল পর (১৯৩৯ খ্রিঃ, মার্চ) সমগ্র চেকোস্লোভাকিয়া জার্মানি দখল করে (This is the twilight of liberty in Central Europe) |

পোল্যান্ড আক্রমণ:

এর পর হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ বন্দরের জন্য সংযোগকারী ভূখণ্ড (Corridor) দাবী করেন। পোল্যান্ড দাবী অগ্রাহ্য করে এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হিটলারকে সতর্ক করে।

তখন হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি করে (১৯৩৯, আগস্ট) পোল্যান্ড আক্রমণ করেন (১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৩৯ খ্রিঃ) প্রত্যুত্তরে ৩রা সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ফ্রান্স পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

উপসংহার:

যুদ্ধ ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হওয়ার ফলে জার্মানির প্রতিশোধ নেওয়ার স্পৃহা থেকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ভ্রান্ত কৌশল, পূর্বতন মিত্রশক্তি জোটের জার্মানির প্রতি কখনো কঠোর ভাব দেখানো আবার কখনো সুবিধা দেওয়ার দুঃখজনক নীতি এবং বিশ্ব মন্দা জার্মানিতে ক্ষমতায় আনল এমন এক গোষ্ঠিকে, যারা চাইল ইউরোপ ইউরোপের বাইরে প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে।

 

 

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment