ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি । Aurangzeb’s religious Policy

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
1.2/5 - (4 votes)

আকবরের মতো ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি কিন্তু উদার ছিলনা। আকবর হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে যে সম্প্রীতির সৃষ্টি করে ছিল সেই সম্প্রীতির বাঁধন খুলে যায় ঔরঙ্গজেবের আমলে।

তিন ছিলেন একদিয়ে গোঁড়া মুসলিম আর অন্য দিকে ছিলেন কঠোর হিন্দু বিরোধী। তিনি তার সৈন্যদের দ্বারা হিন্দুদের সমস্ত রকমের আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করান। তার কাছে কর্মরত হিন্দু কর্মচারিদের ধীরে ধীরে বরখাস্ত করা হয়।

এই লেখার মাধ্যমে আপনারা ঔরঙ্গজেবের ধর্মনীতি ও তার প্রভাব, ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি এবং রাজপুত নীতির ব্যর্থতা কারন গুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি । Aurangzeb’s religious Policy

এক নজরে

আওরঙ্গজেবের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও তার গোঁড়া ধর্ম নীতি আজও বিতর্কের বিষয়। তিনি এক দিকে ছিলেন ইসলামের প্রতি উদার এবং অন্য দিকে ছিলেন হিন্দু ধর্মের প্রতি কঠোর বিরোধী।

ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান নাকি তার মুখস্থ, এছাড়া তিনি হাদিস শিখেছিলেন। আওরঙ্গজেব তার প্রপিতামহ ও পিতামহের মতো বহুত্ববাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি উদার সমর্থক ছিলেন। মুসলিম ধর্মের প্রতি রক্ষণশীলতা তাকে আরো বেশি হিন্দু বিরোধী করে তুলেছিল।

তার আমলে হিন্দুদের ধর্মীয় করকে পুনঃ প্রত্যাবর্তন করা হয়েছিল এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি নানারকম প্রতিবন্ধকতা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিচে আমরা আওরঙ্গজেবের ধর্মনীতি নিয়ে আলোচনা করবো।

ইসলামিক গোঁড়ামি
ঔরঙ্গজেব সুন্নি ইসলামের কঠোর ব্যাখ্যা বাস্তবায়ন করেন এবং শরিয়া আইন প্রয়োগের চেষ্টা করেন।
মন্দির ধ্বংস
ঔরঙ্গজেবে হিন্দু মন্দির ধ্বংস এবং কিছু মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তরের নির্দেশ দেন। যার ফলে বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির সহ বেশ কয়েকটি বিশিষ্ট হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়।
জিজিয়া কর
আকবর দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা জিজিয়া কর ঔরঙ্গজেব অমুসলিমদের উপর ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে পুনর্বহাল করেন।
ইসলামী প্রতিষ্ঠানের প্রচার
ঔরঙ্গজেব ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণের অনুমতি দেন।
অমুসলিমদের উপর নিষেধাজ্ঞা
ঔরঙ্গজেব নতুন হিন্দু মন্দির নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছিলেন, অমুসলিম উত্সব ধর্মীয় রীতিনীতির উপর বিধিনিষেধ এবং শোভাযাত্রা সীমিত করেছিলেন।
ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার প্রচেষ্টা
ঔরঙ্গজেব হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে উৎসাহিত করেন।

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉 মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের যুগে স্বাধীন রাজ্যগুলির উত্থানের বিবরণ দাও

আকবর ও ঔরঙ্গজেব

অন্যান্য ভ্রাতাগণকে পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন করিয়া, পিতা শাহজাহানকে সিংহাসনচ্যুত ও কারারুদ্ধ করিয়া ঔরঙ্গজেব ১৬৫৮ খ্রীষ্টাব্ৰে সিংহাসনে আরোহণ করেন। চরিত্র ও ধর্মনীতি বিষয়ে তিনি ছিলেন আকবর হইতে সম্পূর্ণ পৃথক । আকবরের রাজত্বকাল ছিল উদারতা ও ধর্মবিষয়ে পরম সহিষ্ণুতার যুগ। কিন্তু ঔরঙ্গজেৰ ধৰ্মবিষয়ে সংকীর্ণ ও অসহিষ্ণু নীতির অনুসরণ করিতে আরম্ভ করিলেন।

গোঁড়া হুন্নী মুসলমান

ঔরঙ্গজেব নিজে ছিলেন গোঁড়া সুন্নী মুসলমান। তিনি কোরাণে নির্দ্ধারিত ইসলামীয় অনুশাসনকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করিতে অতিরিক্ত উৎসাহী ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কঠোর সংযম ও নিয়মানুবর্তিতা পালন করিয়া চলিতেন। তাঁহার এই গোঁড়া ধর্মীয় মনোভাব রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের উপরও প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল।

ইসলামীয় অনুসাশনে দেশ শাসন

মোগল সাম্রাজ্যে তিনি মহম্মদ ও কোরাণের প্রভুত্ব স্থাপন করিবার জন্য সর্বপ্রকারে চেষ্টা করিতে লাগিলেন; ভারতকে ‘দার-উল-ইসলাম’-এ (Land of Islam) পরিণত করাই তাঁহার মূল উদ্দেশ্য হইয়া উঠিল ৷ তাঁহার ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সমস্ত নীতি এই উদ্দেশ্য সাধনেই নির্দ্ধারিত হইল।

সুন্নী মুসলমান সম্প্রদায়ের মনস্তুষ্টি

এই ধর্মান্ধ সংকীর্ণ নীতি অনুসরণ করা ঔরঙ্গজেবের নিকট আর এক দিক দিয়াও প্রয়োজনীয় হইয়াছিল। যে গোঁড়া সুন্নী মুসলমান সম্প্রদায়ের সহযোগিতার ফলে তিনি সিংহাসন লাভ করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন তাহাদের মনঃতুষ্টির জন্যও তাঁহাকে অত্যন্ত দ্রুত গোঁড়া-পন্থী নীতিসমূহ গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। সিংহাসনে আরোহণ করিয়া তিনি আকবরের আমল হইতে দরবারে প্রচলিত বহু অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির পরিবর্তন সাধন করিলেন।

অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির পরিবর্তন হিন্দুদের উপর বিধিনিষেধ

অতঃপর তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে কতকগুলি ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি হিন্দু ব্যবসায়ীদের উপর শুল্ক কর ধার্য করিলেন অথচ মুসলমান ব্যবসায়ীদের উপর হইতে উহা উঠাইয়া লইলেন।

হিন্দুদের বিদ্যালয় ও মন্দির সমূহ ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য শাসনকর্তাদের উৎসাহ দেওয়া হইল ; নূতন হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ করিয়া দেওয়া হইল ৷ হিন্দুদের ধর্মকার্যে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করা হইল।

আবার জিজিয়া কর হিন্দু নির্যাতন

১৬৭৯ খ্রীষ্টাব্দে অমুসলমানদের উপর আবার জিজিয়া কর স্থাপন করা হইল। সেই সময় একমাত্র রাজপুত ব্যতীত অন্য কোন হিন্দুর পক্ষে পাল্কী, অশ্ব, হস্তী বা অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ হইল। 

 রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ও ফলাফল

ঔরঙ্গজেবের এই সমস্ত কার্যকলাপ হইতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, ধর্মান্ধতার দ্বারা তিনি তাঁহার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিয়া ছিলেন। তিনি ভুলিয়া গিয়াছিলেন যে ভারতবর্ষ বিভিন্ন জাতিধর্মের নরনারীর বাসভূমি ; সুতরাং হিন্দুস্থানের সম্রাটের পক্ষে কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় অনুশাসন দ্বারা দেশ শাসন করা অসম্ভব।

তিনি রাষ্ট্র ও ধর্মকে অভিন্ন মনে করিবার মত রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়াছেন। কারণ তাঁহার নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াস্বরূপই জাঠ, শিথ, রাজপুত, মারাঠা প্রভৃতি জাতি বিদ্রোহের পথে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল এবং মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি শিথিল ও বিপর্যস্ত করিয়া দিয়াছিল।

“This explains why nothing in the history of Aurangzeb justifies posterity in classing him as a great king.” – Dr. Smith.

ধর্মনীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া (Reaction Against Religious Policy):

কয়েক বৎসরের মধ্যে ঔরঙ্গজেবের ধর্মান্ধ-নীতির বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দারুণ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে লাগিল।

মথুরার জাঠ বিদ্রোহ

১৬৬৯ খ্রীষ্টাব্দে গোকলা নামে এক নেতার অধীনে মথুরার জাঠগণ বিদ্রোহ করে। নির্মম অত্যাচারের মধ্য দিয়া এই বিদ্রোহ দমন করা হইলেও জাঠগণ পর পর আরও কয়েকবার বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিল।

যুন্দেলা রাজপুতগণের বিদ্রোহ

ঔরঙ্গজেবের হিন্দু নির্যাতন নীতির বিরুদ্ধে বুন্দেলখণ্ডের বুন্দেলা রাজপুতগণ ১৬৭১ খ্রীষ্টাব্দে তাহাদের নেতা ছত্রশালের পরিচালনায় বিদ্রোহী হইয়া উঠে। অনেক চেষ্টা করিয়াও ঔরঙ্গজেব তাহাদের সম্পূর্ণ দমন করিতে সক্ষম হন নাই; ছত্রশাল মালব দেশের পূর্বাংশে একটি স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।

সৎনামী বিদ্ৰোহ শিখদের নব জাগরণ

১৬৭২ খ্রীষ্টাব্দে পাঞ্জাবের পাতিয়ালা ও মেওয়াট অঞ্চলের বসবাসকারী ‘সৎনামী’গণও বিদ্রোহী হইয়া উঠে। সে বিদ্রোহ অবশ্য দমন হয়। শিখ গুরু তেগবাহাদুর ঔরঙ্গজেবের হিন্দু-বিরোধী নীতির প্রতিবাদ করিলে ঔরঙ্গজেব তাঁহাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

সঙ্গে সঙ্গে শিখদের মধ্যে অশান্তির আগুন ছড়াইয়া পড়িল। গুরু গোবিন্দের নেতৃত্বে শিখজাতি মোগল শক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সংঘর্ষে অবতীর্ণ হইল। স্বাধীনতা স্পৃহা ও নবজাতীয়তাবোধ তাহাদিগকে উদ্বুদ্ধ করিয়া তুলিল।

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি (Rajput Policy):

Raja Jai Singh of Jaipur

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি আকবরের মত বন্ধুত্ব পূর্ন ছিল না। ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতির  দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল

আকবর ও ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি

রাজপুতদের সম্বন্ধে আকবর এক উদার-নীতি অবলম্বন করিয়া তাহাদের সমর্থন, সহযোগিতা ও আনুগত্য লাভ করিয়াছিলেন। এই রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির ফলেই তিনি মোগল সাম্রাজ্যকে কেবল যে বিস্তৃত করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন তাহাই নহে, তিনি সেই বিস্তৃত সাম্রাজ্যকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করিতেও সক্ষম হইয়াছিলেন।

কিন্তু ঔরঙ্গজেব সেই নীতির পরিবর্তন করিয়া রাজপুতদের সম্বন্ধেও তাঁহার একই অনুদার ধর্মনীতি প্রয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন । এই রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার ফলে তিনি সমগ্র রাজপুত জাতিকেই মোগল সাম্রাজ্যের পরম শত্রুতে পরিণত করিলেন।

জয়সিংহকে বিষপ্রয়োগে হত্যা

অম্বরের রাজা জয়সিংহ ছিলেন সাম্রাজ্যের অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি কিন্তু ঔরঙ্গজেব জয়সিংহকে তাঁহার ধর্মনীতির প্রধান শত্রু বিবেচনা করিয়া বিষপ্রয়োগে হত্যা করিতে দ্বিধা করিলেন না।

মাড়োয়ার রাজ্য দখলের ষড়যন্ত্র

উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রক্ষা কার্যে নিযুক্ত থাকা কালে মাড়োয়ার রাজ যশোবন্ত সিংহের মৃত্যু হইলে তিনি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিলেন এবং তথায় এক মোগল বাহিনী প্রেরণ করিলেন মাড়োয়ার রাজ্যটিকে সম্পূর্ণ গ্রাস করিবার উদ্দেশ্যে।

মোগল বাহিনী যশোবন্ত সিংহের এক আত্মীয়কে মাড়োয়ারের রাজা বলিয়া ঘোষণা করিল এবং যশোবন্ত সিংহের শিশুপুত্রকে মোগল অন্তঃপুরে রাখিয়া মুসলমান ধর্মে দীক্ষিত করার সংকল্প করিল।

দুর্গাদাসের নেতৃত্বে রাঠোরগণের যুদ্ধ

কিন্তু যশোবন্ত সিংহের মন্ত্রী রাঠোর সর্দার দুর্গাদাস যশোবন্ত সিংহের স্ত্রী ও শিশুপুত্র অজিত সিংহকে উদ্ধার করিয়া মাড়োয়ারে আসিলেন এবং মাড়োয়ারের রাজপুতগণকে ঐক্যবদ্ধ করিয়া মোগল শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইলেন।

বিরাট এক মোগল বাহিনী আসিয়া মাড়োয়ার দখল করিল, কিন্তু রাঠোরগণ যুদ্ধ চালাইয়া যাইতে লাগিল। শীঘ্রই মেবারের রাজসিংহও ঔরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাহাদের সহিত যোগ দিলেন।

ঔরঙ্গজেব কর্তৃ ক মেবার আক্রমণ

জিজিয়া কর মেবারের উপরও ধার্য করার ফলে রাজসিংহ পূর্ব হইতেই ঔরঙ্গজেবের উপর অসন্তুষ্ট হইয়া উঠিয়াছিলেন। এখন মাড়োয়ার হইতে সাহায্যের আবেদন আসিলে তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলেন; সঙ্গে সঙ্গে ঔরঙ্গজেবও মেবার আক্রমণ করিলেন।

রাজসিংহের প্রতিরোধ আকবরের বিদ্রোহ

উদয়পুর ও চিতোর মোগল করায়ত্ত হইল, কিন্তু রাজসিংহ আরাবল্লী পর্বতশ্রেণীর আশ্রয় হইতে যুদ্ধ চালাইতে লাগিলেন। রাজপুত বাহিনীকে পর্যুদস্ত করিতে না পারায় প্রতিক্রিয়া হিসাবে মোগলদের মধ্যেই আভ্যন্তরীণ গোলযোগ দেখা দিল।

ঔরঙ্গজেবের পুত্র আকবর পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হইয়া রাজপুতগণের সহিত যোগদান করিলেন। ঔরঙ্গজেব অবশ্য কূট কৌশল অবলম্বন করিয়া আকবর ও রাজপুতগণের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করিতে সক্ষম হইলেন। কিন্তু তাঁহার যুদ্ধ পরিকল্পনা অনেকখানি ব্যাহত হইল।

মেবারের সহিত ঔরঙ্গজেবের সন্ধি (জয়সিংহের সার্থক যুদ্ধ পরিচালনা )

সুযোগ বুঝিয়া রাজসিংহের পুত্র জয়সিংহ মালব ও গুজরাট পর্যন্ত আক্রমণ করিলেন। ইত্যবসরে দাক্ষিণাত্যের রাজনৈতিক অবস্থা জটিল হইয়া উঠিলে ঔরঙ্গজেব বাধ্য হইয়া তাঁহার সহিত সন্ধি স্বাক্ষর করিলেন। জয়সিংহ জিজিয়া করের পরিবর্তে ঔরঙ্গজেবকে কয়েকটি পরগণা দান করিয়া সমগ্র মেবারের রাণা বলিয়া স্বীকৃতি লাভ করিলেন ।

মাড়োয়ারের সহিত সন্ধি

ইহার পর রাঠোরগণ একক শক্তিতে যুদ্ধ চালাইয়া গেলেন । ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বাহাদুর শাহ ১৭০৯ খ্রীষ্টাব্দে অজিত সিংহকে মাড়োয়ার রাজ বলিয়া স্বীকার করিয়া লইলে এই যুদ্ধের অবসান হয়। সুতরাং ইহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হইবে যে ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছিল।

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতির ব্যর্থতা

ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি ব্যর্থতার পিছনে অনেকগুলো কারণ অন্তর্নিহিত ছিল সেগুলো আমরা নিম্মে আলোচনা করলাম-

রাজপুত জাতিকে শত্রুতে পরিণত করার ফল

  • (ক) মেবার বা মাড়োয়ার কোথাও তিনি সাফল্য লাভ করিতে পারেন নাই; অথচ প্রচুর অর্থ ও সৈন্য তিনি এই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করিয়াছিলেন।
  • (খ) মোগল সাম্রাটের রাজনৈতিক মর্যাদাও যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হইয়াছিল ৷
  • (গ) রাজপুত জাতিকে তিনি শত্রুতে পরিণত করার ফলে উত্তর-পশ্চিমের আফগানদের বিরুদ্ধে বা দাক্ষিণাত্যের মারাঠাদের বিরুদ্ধে তিনি তাহাদের কোন সাহায্যই লাভ করিতে পারিলেন না, অথচ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য উহার খুবই প্রয়োজন ছিল।
  • (ঘ) উপরন্তু রাজপুত জাতির মধ্যে বিদ্রোহী ভাব জাগাইয়া তিনি মোগল শক্তির শত্রুগোষ্ঠী বৃদ্ধি করিয়াছিলেন ও সাম্রাজ্যের ভাঙ্গনের পথ প্রশস্ত করিয়া দিয়াছিলেন ।

উপসংহার:

সম্রাট আকবরের মতন ঔরঙ্গজেব ধর্ম সহিষ্ণু তা দেখাতে পারেননি ৷ উপরে উল্লেখিত ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি সমস্ত দিক দিয়া বিচার করিয়া দেখিলে দেখা যায় যে ঔরঙ্গজেবের রাজপুত নীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইযাছিল ৷

আমার দেওয়া ঔরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতি সম্পর্কে তর্থ্য ছাড়া অন্যকোন তথ্য আপনাদের জানা থাকলে আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন, আর প্রয়োজনে বন্ধুদের কাছে শেয়ার করতে পারেন।

FAQs

প্রশ্ন: ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর কে সিংহাসনে বসেন?

উত্তর: ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যু পর তার পুত্র মুয়াজ্জেম প্রথম শাহ আলম বাহাদুর শাহ উপাধি নিয়ে মুঘল সিংহাসনে বসেন।

প্রশ্ন: ১৬৭৯ খ্রীঃ ঔরঙ্গজেব জিজিয়া করের পুনঃপ্রবর্তন করেন কেন?

উত্তর: ঔরঙ্গজেব কঠর এবং রক্ষণশীল মুসলমান হওয়ার কারণে তিনি চেয়েছিলেন জিজিয়া করকে পুনঃপ্রবর্তন করার মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠান ব্যয় বহুল করে তোলা এবং যাতে মুসলিম ধর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ আরো বাড়ানো।

প্রশ্ন: ঔরঙ্গজেবের কতজন স্ত্রী ছিল?

উত্তর: সম্রাট মুহম্মদ ঔরঙ্গজেবের (আজম শাহ) তিনটি স্ত্রী ছিল, যাদের নাম যথাক্রমে দিলরাস বানু বেগম, নবাব বাই,এবং ঔরঙ্গাবাদী মহল।

প্রশ্ন: ঔরঙ্গজেব কত বছর দাক্ষিণাত্যে ছিলেন?

উত্তর: ঔরঙ্গজেব 1658 সালে দাক্ষিণাত্যে আসার পর থাকে তার 1707 সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রায় 49 বছর দাক্ষিণাত্যে ছিলেন।

প্রশ্ন: ঔরঙ্গজেবের আমলে দুজন রাজপুত নেতার নাম লেখ

উত্তর: ঔরঙ্গজেবের আমলে দুজন রাজপুত নেতার নাম হল মারওয়ারের রাজা যশবন্ত সিং এবং জয়পুরের রাজা জয় সিং।

প্রশ্ন: ঔরঙ্গজেবের উপাধি কি ছিল?

উত্তর: ঔরঙ্গজেবের উপাধি ছিল আলমগীর, যার অর্থ হল বিশ্বজয়ী। ঔরঙ্গজেবের পুরো নাম হল আবু মুজাফ্‌ফর মহিউদ্দিন মুহাম্মদ ঔরঙ্গজেব আলমগীর।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment