আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও শাসননীতি

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
5/5 - (1 vote)

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও শাসননীতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আলাউদ্দিন খিলজি তার শাসন কালে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে যে সমস্ত সংস্কার নিয়ে এসে ছিল তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাজার নিয়ন্ত্রণ নীতি। জিয়াউদ্দিন বারানি তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে এবিষয়ে লিখে গেছেন।

আলাউদ্দিনের স্বপ্ন ছিল সমগ্র ভারত জয়ের তাই তার জন্য প্রয়োজন ছিল বিশাল সেনাবাহিনীর। এই সমস্ত সৈন্যদের রক্ষণাবেক্ষণে যে বেতন লাগবে তা দিতে গেলে মাত্র পাঁচ বছরে কোষাগার শূন্য হয়ে যেতে পারে।

তাই তিনি পরিকল্পনা করতে থাকেন যে অল্প বেতনে কিভাবে বেশি সংখ্যাক সৈন্যকে রাখা যায়।

তিনি বাজার দড় নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেন, যাতে কম বেতনও সৈন্যদের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।

আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও শাসননীতি

এক নজরে

আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন 14 শতকে দিল্লি সালতানাতের একজন শক্তিশালী শাসক। 1296 থেকে 1316 সাল পর্যন্ত তার শাসনামলে বাজার দরকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল আনার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

আলাউদ্দিন খলজির বাজার দর নিয়ন্ত্রণ বা দিওয়ান-ই-রিয়াসত

আলাউদ্দিন খলজির বাজার দরকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষে “বাজার নিয়ন্ত্রণ” বা “দিওয়ান-ই-রিয়াসত” নামে একটি ব্যবস্থা চালু করেন। এর মূল লক্ষ ছিল বাজার দরকে নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতিকে রোধ করা। খাদ্যশস্য ও কাপড়ের ন্যায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম রাষ্ট্র নির্ধারন করবে। ব্যবসায়ীদেরকে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ কিনতে পারে।

কালোবাজারি রুখতে জরিমানা

আলাউদ্দিন খলজি বিশেষ করে মজুতদারি ও কালোবাজারি রুখতে বড় পদক্ষেপ নেয়। কারণ তিনি জানতেন অনেক ব্যাবসায়ী ইচ্ছা করে পণ্য সামগ্রিক মজুত করে রেখে কৃত্রিম ঘাটতির সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়াবে। তাই তিনি কালোবাজারি রুখতে দোষী ব্যক্তিদের উপর ভারী জরিমানা আরোপ করেন।

“মুন্সিস” নামে গুপ্তচর নিয়োগ

আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা হল “মুন্সিস” নামে গুপ্তচর নিয়োগ। এরা ক্রমাগত বাজারের মূল্য ওঠা নামার উপর লক্ষ্য রাখতেন এবং এই রিপোর্ট তাদের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাতো। এদের পর্যবেক্ষণের দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্থি প্রদান করা হত।

বণিকদের জন্য সরাই (আবাসন)-এর ব্যবস্থা করেন

আলাউদ্দিন খলজি ব্যবসা-বাণিজ্যকে উৎসাহ দিতে ব্যাবসায়ীদের জন্য নানারকম সুযোগ-সুবিধা চালু করেন। ভ্রমণকারী বণিকদের কথা মাথায় রেখে বাণিজ্য পথ বরাবর সরাই নির্মাণ করেন। যার ফলে দূর থেকে আগত বণিকরা এখানে বিশ্রাম নিতে ও থাকতে পারতেন।

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉 আলাউদ্দিন খলজির সিংহাসন আরোহন ও দক্ষিণ ভারত অভিযান

আলাউদ্দিনের শাসননীতি (Principles of Adminis- tration):

গতানুগতিক শাসন- পদ্ধতির পরিবর্তন

দিগ্বিজয়ী আলাউদ্দিন কেবল যে তাঁহার সাম্রাজ্যকে সমগ্র ভারতে বিস্তৃত করিবার দিকেই সম্পূর্ণ ব্যস্ত ছিলেন তাহা নহে, তিনি দেশের শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্যও যথেষ্ট শক্তি নিয়োগ করিয়াছিলেন।

তিনি যে শাসন নীতি অনুসরণ করিয়াছিলেন তাহা পূর্ববর্তী সুলতানদের শাসন নীতি হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তিনি গতানুগতিকতাকে ত্যাগ করিয়া শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নূতন শাসন পদ্ধতি উদ্ভাবন করিতে সচেষ্ট ছিলেন।

রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি দ্বারা শাসন

তিনি নিজে ছিলেন একজন গোঁড়া মুসলমান; কিন্তু ধর্মনীতি দ্বারা তিনি তাঁহার রাজনৈতিক দৃষ্টি আচ্ছন্ন হইতে দিতেন না । ধর্মের আইন শাসনকার্যে সাধারণতঃ অচল বলিয়া তিনি মনে করিতেন; ইসলামীয় ধর্মনীতির ভিত্তিতে ও ‘শরিয়তের বিধান অনুসারে রাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করার পক্ষপাতী তিনি ছিলেন না।

সুতরাং উলেমাদের উপদেশ ও হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করিয়া আলাউদ্দিন নিজ মত অনুসারেই শাসনকার্য পরিচালনা করিতেন ।

“I do not know whether this is lawful or unlawful; whatever I think to be for the good of the state, or suitable for the emergency, that I decree … …” – Ala-ud din (vide History of Mediaeval India – Ishwari Prasad.)

স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্র (Absolute Monarchy):

সুলতানের অপ্রতিহত ক্ষমতা

আলাউদ্দিন ছিলেন সীমাহীন রাজতন্ত্রের পক্ষপাতী। রাজার দৈবম্বত্বে তিনি বিশ্বাস রাখিতেন এবং স্থলতানের ব্যক্তিগত মর্যাদা সম্বন্ধেও তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন । সুতরাং তাঁহার শাসন পদ্ধতির মূল কথা ছিল সুলতানের ক্ষমতা অপ্রতিহত করিয়া তোলা।

কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা

তাই তিনি এক শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা গড়িয়া তুলিলেন । উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের বিদ্রোহ, অভিজাত সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাচার, রাজাদেশ সম্বন্ধে সাধারণের মধ্যে অমান্যের ভাব, কর্তব্য কার্বে অবহেলা প্রভৃতির পশ্চাতে তিনি কয়েকটি কারণ লক্ষ্য করিয়াছিলেন এবং সেগুলি দূর করিবার জন্যও ব্যবস্থাদি অবলম্বন করিলেন ।

আমীর ওমরাহ গণ সম্বন্ধে নীতি (মদ্যপান নিষিদ্ধ, মেলামেশা বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত)

সর্বপ্রথমে তিনি আমীর ও ওমরাহ গণের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব নষ্ট করিবার জন্য তৎপর হইলেন এই উদ্দেশ্যে তিনি মদ্যপান নিষিদ্ধ করিয়া দিলেন, আমীর ও ওমরাহ গণের মধ্যে পরস্পর মেলামেশা ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করিলেন ।

জায়গীর প্রথা বিলুপ্ত অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ

বিদ্রোহোন্মুখ শ্রেণী ও সম্প্রদায়ের আর্থিক স্বচ্ছলতা নষ্ট করিবার জন্য তিনি জায়গীর প্রথা বা বিনা খাজনায় জমি ভোগ করিবার প্রথার বিলোপ সাধন করিলেন। যে কোন অজুহাতে প্রজাবর্গের নিকট হইতে যে কোন পরিমাণ অর্থ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হুইল ৷

ধনবান হিন্দুমাত্রকেই নানাভাবে শোষণ করিয়া তাহাদের অর্থবল নষ্ট করা হইল । যাহাতে গ্রাসাচ্ছা- দনের সমস্যা লইয়াই তাহারা ব্যস্ত থাকে এবং বিদ্রোহ বা ষড়যন্ত্র করিবার মত এতটুকু সময় না পায়। “No Hindu could hold up his head and in his house no sign of gold and silver or any superfluity was to be seen ” – Smith.

গুপ্তচর বাহিনী নিযুক্ত

সঙ্গে সঙ্গে এক গুপ্তচর বাহিনী গড়িয়া তুলিয়া তিনি আমীর, ওমরাহ ও রাজকর্মচারীদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে সর্বদা খবর সংগ্রহ করিতেন এবং কোন প্রকার সন্দেহজনক কার্যকলাপের খবর পাইলে তিনি পূর্ব হইতেই কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করিতেন। এইরূপ ভাবে তিনি রাজশক্তিকে দেশে সর্বেসর্বা করিয়া তুলিলেন। ইহাতে জনসাধারণের ব্যক্তিস্বাধীনতা নষ্ট হইল সত্য, কিন্তু শৃঙ্খলা ফিরিয়া আসিয়াছিল ।

সামরিক সংগঠন (Military Organisation):

সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী দুর্ধর্ষ বাহিনী গঠন

আলাউদ্দিন ছিলেন সম্পূর্ণভাবে সামরিক শক্তিতে বিশ্বাসী। স্বৈরতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিরোধ, রাজ্য বিস্তার প্রভৃতির জন্য একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা তিনি বোধ করিয়াছিলেন। সৈন্যবাহিনীকে নূতন পদ্ধতিতে সংগঠিত করিয়া, তাহাদিগকে নূতন সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তিনি এক দুর্ধর্ষ ‘খলজী বাহিনী’ গড়িয়া তুলিলেন।

স্থায়ী সৈন্যবাহিনী জায়গীর প্রথার বিলুপ্তি

প্রথমতঃ, তিনি সর্বসময়ের জন্য এক বিশাল স্থায়ী সৈন্যবাহিনী (Standing army) সৃষ্টি করিলেন, এবং ‘আর্জ-ই-মুমালিক’ (Arz-I-Mumalik) নামে এক উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে সামরিক বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করিলেন। দ্বিতীয়তঃ, সৈন্যগণ যাহাতে স্বার্থান্বেষী হইয়া উঠিতে না পারে সেজন্য তিনি তাহাদিগকে জায়গীরের পরিবর্তে নগদ বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তন করিলেন।

দুর্নীতি দমন এবং সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনে মূল্য নিয়ন্ত্রণ

তৃতীয়তঃ, দুর্নীতি বন্ধ করিবার জন্য তিনি অশ্বারোহী বাহিনীতে ঘোড়া দাগিবার ব্যবস্থা করিলেন। সর্বশেষে, সৈন্যগণ যাহাতে অল্প বেতনে অথচ স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করিতে পারে তজ্জন্য তিনি দৈনন্দিন জীবনের জিনিষপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করিরার নীতি গ্রহণ করিলেন। এই সমস্ত ব্যবস্থার ফলে একটি নূতন সামরিক পদ্ধতির ভিত্তি রচিত হইল (‘Khalji Militarism) ।

আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আলোচনা কর

আলাউদ্দিন খলজির মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির মূল উদ্দেশ্য

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ আলাউদ্দিনের শাসনব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। দাক্ষিণাত্য হইতে লুণ্ঠিত ধনদৌলত উত্তর ভারতে কিছুটা মূল্যবৃদ্ধির সৃষ্টি করিয়াছিল। অপর পক্ষে এক বিশাল বাহিনীর ব্যয় ক্রমশ: বর্ধিত হারে বুদ্ধি পাইয়া যাইতেছিল। সুতরাং আলাউদ্দিন কয়েকটি নূতন পন্থা গ্রহণ করিলেন।

মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য হ্রাস

বাজারে বিক্রীত ফসল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণ করিবার ব্যবস্থা করিলেন; দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাস করিবার আদেশ জারী করিলেন।

‘সাহনা-ই-মণ্ডী’ নামক নব-নিযুক্ত রাজকর্মচারীর নিকট বণিক ও বিক্রেতাগণকে নাম রেজিস্ত্রী করিতে নির্দেশ দেওয়া হইল; লাইসেন্স ব্যবস্থা বা অনুমতি পত্র ছাড়া চাষীদের নিকট হইতে সরাসরি ফসল ক্রয় নিষিদ্ধ হইল।

কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা

নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে এবং চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিদানের করা হইল; দেওয়ান-ই-রিয়াস (Diwan-I-Riyasat), সার-ই-আদল প্রভৃতি কর্মচারীর উপর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকরী করিবার ভার অর্পিত হইল।

ফসল মজুতের ব্যবস্থা ও তাহার ফলাফল

সুলতানের শস্য ভাণ্ডারে রাজ্যের সকল স্থান হইতে নির্দিষ্ট পরিমাণ শস্য জমা দিতে হইত, যাহাতে দুর্ভিক্ষ পীড়িত স্থানে সময়মত তাহা প্রেরণ করা যায়। এই সমস্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়া সুলতান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকরী করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন এবং তাঁহার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইয়াছিল।

“The unvarying price of grain was looked upon as one of the wonders of the time”-Barani.

তবে একথা সত্য যে ইহাতে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান সঙ্কুচিত হইয়া পড়িয়াছিল এবং ব্যবসায়িগণ দ্রব্য উৎপাদনে নিরুৎসাহ ভাব দেখাইতে লাগিল। তবে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী পোষণ করিতে আলাউদ্দিনের যথেষ্ট সুবিধা হইয়াছিল।

রাজস্ব-নীতি (Revenue system):

চিরাচরিত রাজস্ব-নীতিপরিহার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য

দিল্লীর সুলতানগণ এতদিন হিন্দু রাজত্বকালের প্রচলিত রাজস্বনীতিই অনুসরণ করিয়া আসিতেছিলেন ৷ আলাউদ্দিন সেই চিরাচরিত রাজস্ব-নীতি পরিত্যাগ করিয়া রাজস্ব বিভাগে বহুবিধ সংস্কার সাধনে তৎপর হইলেন।  

রাজকোষের অর্থবল বৃদ্ধি করা এবং জনসাধারণের অর্থ নৈতিক শক্তি খর্ব করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই তাঁহার প্রধান লক্ষ্য ছিল।

বহুবিধ কর ও শুল্ক

রাজস্ব উৎপন্ন ফসলের দ্বারা গ্রহণ করা হইত এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উৎপন্ন ফসলের অর্ধাংশ ভূমি-রাজস্ব হিসাবে ধার্য হইত। ইহা ছাড়া ভিটা কর, গোচারণ কর ও আমদানি রপ্তানি শুল্ক আদায় হইত ৷ অতিরিক্ত কর হিসাবে হিন্দুদের উপর জিজিয়া কর চাপান হইল ৷

জমি-জরিপ জায়গীর বাজেয়াপ্ত

কৃষকদের জমির পরিমাণ ও উহার মূল্য নির্ধারণ করিবার জন্য জমি-জরিপ করার ব্যবস্থা হইল। দেবোত্তর জায়গীর বা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত জায়গীর সমূহ বাজেয়াপ্ত করা হইল। প্রাচীন কাল হইতে হিন্দু কর্মচারিগণ বিনা খাজনায় জমি ভোগদখলের যে সমস্ত সুবিধা লাভ করিয়া আসিতেছিলেন তিনি সেই সমস্ত সুবিধা বাতিল করিয়াছিলেন।

সরকার ভিন্ন অপর কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পক্ষে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফসল মজুত করা নিষিদ্ধ হইল । এই সমস্ত নূতন নীতি প্রয়োগের ফলে রাষ্ট্রের রাজস্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পাইল এবং কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বার হইয়া উঠিল।

কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাসন (Central and Provincial):

কেন্দ্রীয় মন্ত্রি ও প্রাদেশিক শাসন

কেন্দ্রীয় শাসনকে শক্তিশালী করিবার জন্য আলাউদ্দিন সমস্ত রকম ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছিলেন। এক সুশিক্ষিত সৈন্য বাহিনী ছিল তাঁহার প্রধান অস্ত্র।

তিনি অবশ্য কেন্দ্রে বহু মন্ত্রি নিয়োগ করিয়াছিলেন, কিন্তু তিনিই ছিলেন সমস্ত শক্তির আধার এবং মন্ত্রিগণ ছিলেন তাঁহার আজ্ঞাবাহী মাত্র। প্রাদেশিক শাসকগণের ক্ষমতা তিনি যথেষ্ট পরিমাণে খর্ব করিয়াছিলেন। অর্থাৎ তাঁহার আমলে স্বৈরাচারী শাসনের চরম বিকাশ হইয়াছিল।

উপসংহার

উপরে উল্লেখিত আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণ ও শাসননীতি আলোচনা করে এটা বলা যায় যে খলজির নীতিগুলি তার শাসনামলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তার এই বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভারতের পরবর্তী শাসকদের জন্য একটি নজির স্থাপন করেছিল।

FAQs আলাউদ্দিন খলজির বাজার নিয়ন্ত্রণ

প্রশ্ন: বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করেন কোন সুলতান?

উত্তর: বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করেন আলাউদ্দিন খলজি

প্রশ্ন: আলাউদ্দিন খিলজি মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির মূল উদ্দেশ্য?

উত্তর: আলাউদ্দিন খিলজি মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির মূল উদ্দেশ্য হল বাজার দর নিয়ন্ত্রণ।

প্রশ্ন: দেওয়ান ই রিয়াসাত কি?

উত্তর: আলাউদ্দিন খলজি দিল্লি বা দিল্লির বাইরে থেকে আগত বণিকদের নির্দিষ্ট দ্রব্য মূল্য নির্ধারণ করার জন্য একটি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য দপ্তর তৈরি করেন, যা দেওয়ান-ই-রিয়াসাত (Diwan-i-Riyasat) নামে পরিচিত।

প্রশ্ন: বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কে চালু করেন?

উত্তর: বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেন আলাউদ্দিন খলজি।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment