কোন পরিস্থিতিতে পটসডাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
Rate this post

পটসডাম সম্মেলন হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত মিত্র শক্তির সদস্যদের মধ্যে ঘটা একটি বৈঠক। এই নিবন্ধনের মাধ্যমে কোন পরিস্থিতিতে পটসডাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তার একটি বিস্তারিত ধারণা দেব।

1945 সালের 17 জুলাই থেকে 2 আগস্ট পর্যন্ত এই সম্মেলন জার্মানের বার্লিনের পটসডামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যেকারণে এই সম্মেলনকে পটসডাম সম্মেলন বলা হয়।

এই সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী দেশ গুলি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য।

জার্মানির বিভাজন, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, নিরস্ত্রীকরণ, পোল্যান্ডের সীমানা, পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত প্রভাব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই সম্মেলনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

নতুন পরিস্থিতিতে পটসডাম সম্মেলন :

জার্মানির আত্মসমর্পণের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে মিত্রপক্ষের মধ্যে যুদ্ধকালীন সম্মেলনগুলির শেষ সম্মেলন বসে জার্মানির পটসডাম নগরে। এই সম্মেলনে তিন বিজয়ী দেশের নেতারা ট্রুম্যান, এটলি ও স্ট্যালিন মিলিত হয়েছিলেন।

জার্মানির আত্মসমর্পণের ফলে তাকে দখল ও শাসন করা সম্পর্কে যে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছিল ও জার্মানির মিত্রশক্তিগুলির সংগে শান্তিচুক্তি স্থাপনের প্রশ্নে যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তা সম্মেলনের পরিবেশকে জটিল করে তুলেছিল।

মিত্রপক্ষের পূর্বের নেতাদের মধ্যে যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও বোঝাপড়ার মনোভাব তৈরি হয়েছিল; তা এই সম্মেলনে নতুন নেতাদের মধ্যে ছিল না। পূর্বতন সম্মেলন গুলিতে অংশ গ্রহনকারী নেতাদের মধ্যে একমাত্র স্ট্যান্সিনই এই সম্মেলনে অংশ নেন।

রুজভেল্টের পরিবর্তে এসেছেন ট্রুম্যান এবং চার্চিলের পরিবর্তে এটলি পটসডাম সম্মেলনে মিলিত হন। ট্রুম্যান মার্কিন সেনানায়কদের দ্বারা প্রভাবিত হন। এদিকে ইয়াল্টা চুক্তি অনুসারে পোল্যান্ডে অবাধ ও স্বাধীন নির্বাচন দ্বারা সরকার গঠনের পরিবর্তে রাশিয়ার লাল ফৌজের উপস্থিতির সুযোগে পোলিশ কমিউনিস্ট পার্টি সরকার গঠন করায় ট্রম্যান উত্তেজিত হন।

অন্যদিকে আমেরিকা অ্যাটম বোমার সফল বিস্ফোরণ ঘটালে রাশিয়া বেশ অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। রাশিয়ার আতঙ্ক হয় যে, আমেরিকা তাকে ধ্বংস করার কাজে ওই বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

মধ্য ইউরোপে রাশিয়ার রাজ্য দখল এবং পূর্ব-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রুশ মদতে কমিউনিস্ট সরকার গঠন পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলিকে রাশিয়া সম্পর্কে সন্দিহান করে তুলেছিল। এরূপ পরিবেশে পটসডাম সম্মেলনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য হওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও পটসডাম সম্মেলন একেবারে ব্যর্থ হয়েছে একথা বলা ঠিক নয়।

সম্মেলনে মতানৈক্যের বিষয় :

পটসডাম সম্মেলনে আলোচ্য বিষয়গুলির মধ্যে জার্মানি সম্পর্কে আলোচনা মুখ্য অংশ নেয়। জার্মানির ভাগবণ্টন ব্যাপারে নেতাদের মধ্যে মতৈক্য থাকলেও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে নেতৃবর্গের মধ্যে মতবিরোধ ঘটেছিল।

জার্মানি থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে চাইলে রাশিয়ার এই মতের বিরুদ্ধে এটলি ও টুম্যান আপত্তি জানায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে গিয়ে যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতেই তারা এ ব্যাপারে আপত্তি জানায়।

পটসডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত :

পটসডাম সম্মেলনে (১৯৪৫, ১৭ জুলাই – ২রা আগস্ট) সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়,

(১) ব্রিটেন, ফ্রান্স, আঃ যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চিনএই পাঁচ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রিদের এক সমিতি জার্মানি ইতালি, বুলগারিয়া, রুমানিয়া, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ডের সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরি করবে।
(২) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করা হবে।
(৩) ক্ষতিপূরন দান থেকে অস্ট্রিয়া অব্যাহতি পাবে।
(৪) সাধারন নির্বাচনের মাধ্যমে পোল্যান্ডে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে।
(৫) পূর্ব এশিয়ার উত্তরাঞল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও দক্ষিনাঞ্চল পোল্যান্ড পাবে।
(৬) জার্মানি থেকে নাৎসিবাদ উচ্ছেদ করা হবে।
(৭) বি- কেন্দ্রীকৃত গনতন্ত্র জার্মানিতে প্রবর্তিত হবে।
(৮) জার্মানির শিক্ষা, অর্থনীতি মিত্রপক্ষের নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
(৯) জার্মানির থেকে আদায়ী ক্ষতিপূরনের অর্ধেক সোভিয়েত ইউনিয়ন পাবে।
(১০) জার্মানির অবশিষ্ট সামরিক সম্ভার মিত্রশক্তি ভাগ করে নেবে।

ঠান্ডা লড়াই-এর সূত্রপাত :

ইয়াল্টা বৈঠকের সময় জার্মানির পরাজয় একরকম সুনিশ্চিত হয়েছিল। কিন্তু সুদূর প্রাচ্যে তখনও জাপান ও মিত্রশক্তিবর্গের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছিল। জাপানি সেনাদের তীব্র প্রতিরোধের দরুন তখনও যুদ্ধ সমাপ্তির আশু লক্ষণ দেখা যায়নি।

এমতাবস্থায় চার্চিল ও রুজভেল্ট রাশিয়ার সঙ্গে এক গোপন চুক্তির মাধ্যমে ঠিক করেন যে, রাশিয়া জার্মানির পতনের পরই জাপানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নেবে।

স্ট্যালিন এর বিনিময়ে অনেক সুবিধা আদায় করে নিয়েছিলেন। অবশ্য বলা হয়েছিল যে, এই শর্ত এখন গোপন থাকছে। জাপানের আত্মসমর্পণের পরেই তা কার্যকরী হবে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

পটসডাম সম্মেলন চলাকালীন ট্রুম্যান ওয়াশিংটন থেকে আমেরিকার অ্যাটম বোমার সফল পরীক্ষাবার্তা পান। সঙ্গে সঙ্গে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করাতে আর রাশিয়ার সাহায্যের প্রয়োজন নেই বুঝতে পেরে ট্রুম্যান পটসডাম সম্মেলনে তাঁর কথাবার্তার সুর পাল্টে দেন।

রাশিয়ার সৈন্যের পা জাপানের মাটিতে পড়ার আগেই আমেরিকা ৬ই আগস্ট, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানের হিরোসিমা শহরে অ্যাটম বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং প্রতিশ্রুতি মতো রাশিয়া জাপানের বিরুদ্ধে ৮ই আগস্ট যুদ্ধযাত্রা করে। পরের দিন ৯ই আগস্ট আমেরিকা পুনরায় জাপানের নাগাসাকি শহরে অ্যাটম বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।

২রা সেপ্টেম্বর জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনা রাশিয়াকে চিন্তিত ও ভীতিগ্রস্ত করে তোলে। আবার পরোক্ষভাবে তাঁকে শাসানো হয়। এরূপ বিষাদ ও বিদ্বেষময় পরিবেশে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ২রা আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সর্ব শেষ শীর্ষ সম্মেলন হিসেবে পটসডাম সম্মেলন শেষ হয়।

সম্মেলনের নেতৃবৃন্দ এর সাফল্য সম্পর্কে যতই কথার ফুলঝুরি ওড়াক না কেন এতে তাঁদের মতানৈক্য লুকোনো থাকেনি। এখন থেকে বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই-এর উত্তপ্ত পরিবেশের আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment