আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে বিখ্যাত শাসক শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করবো। তাকে প্রথম মুসলিম শাসক হিসাবে বিবেচনা করা হয় যিনি প্রজাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার পূরণ ও কল্যাণ সাধনের জন্য কাজ করেছিলেন।
শেরশাহ দক্ষ প্রশাসকের পরিচয় দেন, কারণ তিনি প্রশাসনের উন্নয়নের প্রকল্পে বেশ কিছু সংস্কার চালু করেন। তিনি সম্রাট অশোক এবং হর্ষবর্ধনের মতো শাসকদের প্রশাসন ব্যবস্থাকে অনুসরণ করে তার সাম্রাজ্যকে একটি সুন্দর এবং সুষ্ঠ শাসন ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন। নিচে শের শাহ সুরির শাসন ব্যবস্থা আলোচনা করা যাক।
শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা । Rule of Sher Shah Suri in Bengali
শাসক ছিলেন সমস্ত ক্ষমতার উর্দ্ধে, তিনি ছিলেন সর্বেসর্বা তাই তার প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল একজন স্বৈরাচারী শাসকের মতো। তিনি নিজেই তার প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন। সমগ্র সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে এবং প্রতিটি সরকারকে কতো গুলো পরগণায় বিভক্ত করা হয়।
পরগণার কাজের হিসেব নিকেশ দেখাশোনা করার জন্য একজন শিকদার-ই-শিকদারন, একজন কোষাধ্যক্ষ, মুন্সিফ-ই-মুন্সিফান, এবং বেশ কিছু শিকদার (অফিসার) নিযুক্ত করেন। এছাড়া শেরশাহ তার প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনার জন্য এই সমস্ত কর্মচারিদের প্রতি দুই-তিন বছর ছাড়া বদলির বাবস্থা করেন, কিন্তু তার সাম্রাজ্য স্বল্পকালীন হবার কারণে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রশাসনিক সংস্কার | দুর্নীতি দমনের প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগীয় ও প্রশাসনিক সংস্কার করা। |
ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা | “দহশালা” ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ন্যায্য কর ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং জমি পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়, যার ফলে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পায়। |
সড়ক নির্মাণ | বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সৈন্যবাহিনী চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণ করেছে। |
ডাক ব্যবস্থা | সাম্রাজ্য জুড়ে সরকারী চিঠিপত্র দ্রুত সরবরাহের জন্য “ডাক চৌকি” নামে পরিচিত একটি ডাক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠান করেন। |
মুদ্রা সংস্কার | “রুপিয়া” নামে একটি মুদ্রার প্রচলন করেন, যা তার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য সহজতর করতে সাহায্য করে। |
দুর্গ এবং স্থাপত্য | শেরশাহের স্বতন্ত্র স্থাপত্য শৈলীকে তুলে ধরতে রোহতাস দুর্গ এবং পুরনো কেল্লা তৈরি করেন। |
শাসক হিসাবে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয়
শের শাহ ছিলেন একজন সাহসী বীর; হুমায়ুনের বিরূদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি তাঁহার রণকুশলতা ও সামরিক প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন। সামান্য জায়গীরদারের পুত্র হইয়া দিল্লীর সিংহাসন অধিকার করা এবং যুদ্ধের পর যুদ্ধ জয় করিয়া রাজ্য বিস্তার করা কম ক্বতিত্বের পরিচায়ক নহে।
কিন্তু মাত্র পাঁচ বৎসর রাজত্বকালের মধ্যে তিনি শাসনব্যবস্থায় যে সংস্কার সাধন করিয়াছিলেন, তাহার যে উন্নতি সাধন করিয়াছিলেন, তাহা তাঁহাকে ভারত ইতিহাসে অমর করিয়া রাখিয়াছে। তাঁহার অসাধারণ প্রতিভার সবচেয়ে বেশী পরিচয় পাওয়া যায় এই শাসনক্ষেত্রে।
🔥আরও পড়ুনঃ-
শাসন প্রতিভা সম্বন্ধে মতভেদ
কিন্তু তাঁহার শাসন প্রতিভার রূপ নির্ণয়ে সকল ঐতিহাসিকগণই একমত ডাঃ আর. এস. ত্রিপাঠি ও ডাঃ শরণের মতে শের শাহ ছিলেন একজন শাসনতান্ত্রিক সংস্কারক মাত্র, আবিষ্কারক নহেন।
তাঁহাদের মতে তিনি আলাউদ্দিন খলজীর শাসনব্যবস্থাকে কিছুটা উন্নত করিয়া পুনঃপ্রবর্তন করিয়াছিলেন মাত্র, কোন মৌলিকতার পরিচয় দিতে পারেন নাই। কিন্তু ডাঃ কানুনগো স্পষ্ট এই অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন যে আকবর অপেক্ষা শের শাহের সংগঠনী প্রতিভা ছিল অনেক বেশী ।
সমন্বয় সাধনের মহান আদর্শ
আধুনিক ঐতিহাসিকগণের মতে শের শাহ আলাউদ্দিনের শাসনপদ্ধতির কতকগুলি মূলনীতি গ্রহণ করিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁহার উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়াছেন।
ভারতের প্রাচীন ও মুসলমান যুগের শাসন পদ্ধতির শ্রেষ্ঠ ধারাগুলির উপর ভিত্তি করিয়া তিনি স্বীয় প্রতিভার দ্বারা একটি আধুনিক শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি করিয়াছিলেন।
“Some of his reforms were by way of revival and reformations of the traditional features of the old administrative systems of India, Hindu as well as Muslim, while others were entirely original and formed a link between ancient and modern India.” – An Advanced History of India.
শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় সমন্বয় সাধনের উচ্চ আদর্শ দ্বারাই তিনি হিন্দু ও মুসলমান প্রজাবর্গের মধ্যে অনুপ্রাণিত হইয়াছেন ৷ “The whole of his brief administration was based on the Principle of Union.”-Mr. Keene.
স্বৈরতান্ত্রিক কিন্তু প্রজামঙ্গলকামী
শের শাহের শাসনব্যবস্থা ছিল স্বৈরতান্ত্রিক সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই ; কিন্তু তাঁহার সমস্ত শাসনব্যবস্থাই ছিল প্রজাকল্যাণমূলক । রাজ্যের সমগ্র শাসনক্ষমতা শের শাহের নিজহস্তে কেন্দ্রীভূত ছিল। কিন্তু প্রজার মঙ্গলের জন্যই তিনি সে ক্ষমতা প্রয়োগ করিতেন।
সামরিক সংগঠন বহুবিধ সংস্কার
কেন্দ্রে সুচারুরূপে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য চারিজন মন্ত্রী নিযুক্ত ছিলেন। এক একজন মন্ত্রীর উপর এক একটি বিভাগের দায়িত্ব অর্পিত ছিল। মন্ত্রী ছাড়াও আরও উচ্চপদস্থ কেন্দ্রীয় রাজকর্মচারীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
সুলতান ছিলেন সৈন্যবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ; সৈন্য ও সামরিক কর্মচারীগণ প্রত্যক্ষভাবে তাঁহার অধীন ছিল। তিনি সৈন্য- বাহিনীতে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করেন। সৈন্য ও সামরিক কর্মচারীগণকে জায়গীর দেওয়ার পরিবর্তে তিনি বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং সামরিক কর্মচারীগণকে দুই তিন বৎসর অন্তর স্থানান্তরের নীতি প্রচলিত করেন।
সেনানিবাস ও স্থায়ী স্যৈবাহিনী
আলাউদ্দিন খলজীর সামরিক নীতি অনুসরণ করিয়া তিনি ‘দাগ’ ও ‘হুলিয়া’ ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করিয়াছিলেন। সর্বশেষে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সেনানিবাস স্থাপন করিয়া একজন ‘ফৌজদার’-এর অধীনে সৈন্যবাহিনী মোতায়েন করিলেন, অবশ্য সম্রাটের অধীনেও সরাসরি এক বিরাট বাহিনী সব সময়ে প্রস্তুত থাকিত। তাঁহার সময়ে সৈন্য বাহিনীর নিয়মানুবর্তিতা ও দক্ষতা’ বহুগুণে বুদ্ধি পাইয়াছিল।
সরকার ও পরগণার শাসন
শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি তাঁহার সাম্রাজ্যকে ৪৭টি সরকারে বিভক্ত করিয়াছিলেন। এই সরকারগুলির শাসনকার্য পরিদর্শনের জন্য ছিল ‘শিকদার-ই-শিকদারান’ ও ‘মুনসীফ-ই-মুনসীফান’। প্রত্যেকটি সরকারকে আবার বহুসংখ্যক পরগণায় বিভক্ত করা হইয়াছিল।
শিকদার ছিলেন পরগণার সামরিক অধিকর্তা এবং আমীন ছিলেন তাঁহার সর্বোচ্চ বে-সামরিক কর্মচারী। পরগণার রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের ভার ছিল এই আমীনদের উপর ৷ প্রয়োজন বোধে শিকদার তাঁহাকে সামরিক সাহায্য দানে বাধ্য থাকিতেন ৷
রাজকর্মচারীদের স্থানান্তরের নীতি গ্রাম্য শাসন
অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে ছিল মুন্সীফ, খাজাঞ্চী, হিন্দু ও ফার্সী হিসাব-লেখক প্রভৃতি। রাজকর্মচারীগণের উপর কোনরূপ স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তি যাহাতে কাজ করিতে না পারে সেই জন্য তিনি তাহাদের স্থানান্তর করিবার নীতি গ্রহণ করিয়াছিলেন ৷ গ্রামের শাসনভার সাধারণতঃ স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপরই ন্যস্ত থাকিত।
রাজস্ব-সংস্কার, জমি জরিপ ও রাজস্ব নির্ধারণ
রাজস্বের ক্ষেত্রে শের শাহ যে সংস্কার আনয়ন করিয়াছিলেন তাহা সত্যই অভূতপূর্ব। পূর্বে কানুনগো নামক রাজকর্মচারীদের মৌখিক বিবরণের উপর নির্ভর করিয়াই জমির রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করা হইত।
শের শাহ এবার জমির নির্ভুল জরিপের ব্যবস্থা করিলেন এবং জমির উৎপাদিকা শক্তি অনুযায়ী রাজস্ব নির্ধারিত করিয়া দিলেন। জমির উৎপন্ন ফসলের ১/৩ বা ১/৪ অংশ রাজস্ব হিসাবে নির্দিষ্ট হইল; প্রজাগণ উৎপন্ন ফসলের দ্বারা বা অর্থদ্বারা উহা রাজকোষে জমা দিতে পারিত।
কবুলিয়ত ও পাট্টা
কমিশনের ভিত্তিতে ‘মুকদ্দম’, ‘চৌধুরী’, পাটোয়ারী প্রভৃতি কর্মচারীদ্বারা রাজার রাজস্ব আদায় হইত; তবে প্রজাগণ ইচ্ছা করিলে সরাসরি রাজকোষে রাজস্ব জমা দিতে পারিত। ‘কবুলিয়ৎ’ ও ‘পাট্টা’র প্রচলন তিনিই করেন। সাধারণতঃ প্রাকৃতিক দুর্দৈবের ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হইলে রাজস্ব মুকুব করা হইত, এমন কি প্রয়োজন বোধে ঋণদানেরও ব্যবস্থা করা হইত।
কৃষককুলের উন্নতি, শের শাহের রাজস্ব ব্যবস্থায় ঐতিহাসিক গুরুত্ব
কৃষকদের উপর যাহাতে কোন প্রকার উৎপীড়ন না হয় সে দিকে তাঁহার সজাগ দৃষ্টি ছিল ; কারণ তিনি বুঝিয়াছিলেন যে কৃষক কুলের উন্নতির উপরই রাজ্যের উন্নতি নির্ভরশীল ।
শের শাহের এই সমস্ত সংস্কার ভারতের রাজস্ব-ব্যবস্থার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীকালের রাজস্বনীতি মূলতঃ শের শাহের নীতি সমূহকে অনুসরণ করিয়াই নির্ধারিত হইয়াছিল ৷
মুদ্রা-সংস্কার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি
শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যে শের শাহ মুদ্রাব্যবস্থারও সংস্কার সাধন করিয়াছিলেন । তিনি প্রাচীন ও মিশ্রিত মুদ্রার প্রচলন করেন। এবং
‘দাম’ নামে এক নূতন মুদ্রার প্রচলন করেন। আন্তঃপ্রাদেশিক শুল্ক উঠাইয়া দিয়া তিনি ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতির পথ আরও পরিষ্কার করিয়া দিয়াছিলেন।
যাতায়াত ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নতি
যাতায়াতের ব্যবস্থা উন্নত করিয়া, নূতন নূতন পথ ঘাট নির্মাণ করিয়া তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন।
বঙ্গদেশ হইতে পঞ্চনদ পর্যন্ত নির্মিত ‘গ্রাণ্ডট্রাঙ্ক রোড’, আগ্রা হইতে যোধপুর ও আগ্রা হইতে বুরহানপুর পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তা সমূহ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করিয়া দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করিয়াছিল ।
“These series become the veritable arteries of the empire, diffusing a new life among its hitherto benumbred limbs.” -Dr. Qanungo.
পুলিশ ব্যবস্থা ও গুপ্তচর বাহিনী
দেশের অভ্যন্তরে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে শের শাহ পুলিশ -ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করিয়াছিলেন। শান্তি বজায় রাখিবার জন্য এবং অপরাধীকে সায়েস্তা করিবার জন্য তিনি স্থানীয় জনসাধারণের উপরই নির্ভর
করিতেন। দেশের বিভিন্ন অংশের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য শের শাহ গুপ্তচর নিয়োগেরও ব্যবস্থা করিয়াছিলেন।
বিচার ব্যবস্থা গ্রাম্য পঞ্চায়েৎ
শের শাহ যে বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করিতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন তাহা ছিল নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা। প্রতি পরগণার দেওয়ানী বিচারের ভার ছিল আমীনদের উপর; আর ফৌজদারী বিচারের ভার ছিল কাজী ও মীর আদলের উপর।
আইনের চক্ষে সকলেই ছিল সমান, জাতি, ধর্ম বা ব্যক্তির মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য করা হইত না। তবে দণ্ডবিধি সাধারণতঃ কঠোর ছিল। গ্রাম-পঞ্চায়েৎ দ্বারা দেওয়ানী মামলার নিষ্পত্তি করিতে দেওয়া হইত।
প্রজাহিতৈষণা শের শাহের ধর্মনীতি
শের শাহ তাঁহার শাসনব্যবস্থাকে প্রজা মঙ্গলকামী ও নিরপেক্ষ করিয়া গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন। পথের ধারে হিন্দু ও মুসলমান সকলের জন্য সরাইখানা নির্মাণ, রাস্তার ধারে বৃক্ষ-রোপণ, ঘোড়ার পিঠে ডাক চলাচলের ব্যবস্থা প্রবর্তন তাহারই সাক্ষ্য দেয়।
ধর্মনিরপেক্ষ শাসন- ব্যবস্থা
শের শাহের ধর্মমত সম্বন্ধে মতভেদ থাকিতে পারে ; কিন্তু এ কথা সত্য যে নিজে নিষ্ঠাবান মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরধর্ম সম্বন্ধে উদার মনোভাব গ্রহণ করিয়াছিলেন।
রাজনীতির ক্ষেত্রে তিনি উলেমাদের পরামর্শ গ্রহণ প্রয়োজন মনে করিতেন না ; রাজনীতি হইতে তিনি ধর্মকে বিচ্ছিন্ন রাখিতেই সচেষ্ট ছিলেন। তাঁহার শাসনব্যবস্থায় বহু হিন্দু উচ্চ রাজকর্মচারীর পদে নিযুক্ত ছিলেন।
প্রজাসাধারণের সমর্থন – পুষ্ট শাসনব্যবস্থা
সুতরাং একথা নিঃসংশয়ে বলা যায় যে শের শাহই ছিলেন প্রথম মুসলমান সম্রাট যিনি দেশের সমস্ত ধর্মাবলম্বীদের সমর্থনের ভিত্তিতেই আপন শাসন- ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করিতে সচেষ্ট হইয়াছিলেন।
এইক্ষেত্রেই তাঁহার রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। এইজন্যই তাঁহাকে বলা হয় আকবরের অগ্রদূত । “No government-not even the British has shown so much wisdom as did this Pathan.”-Mr. Keene.
উপসংহার
উপরে উল্লেখিত শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা বর্ণনা করে আমরা বলতে পারি 1540 থেকে 1545 সাল পর্যন্ত তার স্বল্পকালীন শাসন ব্যবস্থায় তিনি প্রশাসনিক সংস্কার, ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট নির্মান, ডাক ব্যবস্থা, মুদ্রা সংস্কার, দুর্গ ও স্থাপত্য নির্মাণ ইত্যাদির মাধ্যমে ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে গেছেন। তার কর্ম যজ্ঞের কারণে ইতিহাসে তিনি একজন দক্ষ সুশাসক হিসাবে পরিচিত।
FAQs
প্রশ্ন: শের শাহ কত বছর রাজত্ব করেন?
উত্তর: শের শাহ 1540 থেকে 1545 মোট পাঁচ বছর রাজত্ব করেন।
প্রশ্ন: শেরশাহ ও শেরশাহ সুরি কি একই?
উত্তর: সুর রাজবংশের রাজা ফরিদ খান শেরশাহ উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন। তিনি শেরশাহ সুরি নামেও পরিচিত।
প্রশ্ন: শেরশাহের আসল নাম কি?
উত্তর: শেরশাহের আসল নাম হল ফরিদ খান।
প্রশ্ন: শেরশাহের রাজধানীর নাম কি?
উত্তর: শের শাহ ১৫৪০ থেকে ১৫৪৫ সাল পর্যন্ত তার সাম্রাজ্যকালে প্রশাসনিক ও সামরিক সংস্কারের জন্য তিনি প্রসিদ্ধ লাভ করেছিলেন। তার রাজ্যের রাজধানী ছিল সাসারাম যা বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত।