1761 পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ । Third Battle of Panipath in Bengali

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
Rate this post

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দ মারাঠা শক্তির সঙ্গে আফগান বাহিনী মধ্যে সংঘটিত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে একটি।

দীর্ঘ দিন ধরে চলা এই যুদ্ধে মারাঠা বাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়ে। বিধ্বস্ত মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রশস্ত করে ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তারের পথকে আরো সুগম করে তোলে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ

ইংরেজদের সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধে যে বীজ বপন করা হয়েছিল তার অঙ্কুরোদগম হয় পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে নির্ধারিত হয় যে পরবর্তী কালে ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য কাদের হাতে ন্যস্ত থাকবে।

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ । Third Battle of Panipath in Bengali

এক নজরে

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধটি 14 জানুয়ারী 1761 সালে বর্তমান ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে অবস্থিত পানিপথ শহরের কাছে সংঘটিত হয়েছিল। পানিপথ নামে স্থানে এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার কারণ এই যুদ্ধের নাম পানিপথের যুদ্ধ। এর আগে এখানে আরো দুটো বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

এই ঐতিহাসিক যুদ্ধটি মারাঠি পেশওয়া বালাজি বাজি রাও-এর সঙ্গে আফগান শাসক আহমদ শাহ দুররানির (আহমদ শাহ আবদালি) মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের ফালাফল ছিল সুদূর প্রসারি নিচে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

যুদ্ধের নাম পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ
যুদ্ধ সংঘটিত হয় 14 জানুয়ারী, 1761
স্থানের নাম পানিপথ, হরিয়ানা রাজ্য, ভারত
যুদ্ধে অংশ গ্রহণ কারী মারাঠা সাম্রাজ্য আর দুররানি সাম্রাজ্য
শাসকদের নাম সদাশিব রাও আর আহমদ শাহ আবদালি
জয়ী হন দুররানি সাম্রাজ্য

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉 শিবাজীর চরিত্র ও কৃতিত্ব

আহম্মদশাহ আবদালীর ভূমিকা

কিন্তু মারাঠাগণ কর্তৃক পাঞ্জাব দখল হইলে আহম্মদ শাহ, আবদালীর সহিত তাহাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হইয়া উঠিল। কারণ ইহার পূর্বেই মোগল সম্রাট আহম্মদ শাহের নিকট হইতে আফগান বীর আহম্মদ শাহ আবদালী পাঞ্জাবের কর্তৃত্ব লাভ করিয়াছিলেন। সুতরাং পাঞ্জাব পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি ১৭৫৯ খ্রীষ্টাব্দে পুনরায় ভারত আক্রমণ করিলেন।

মারাঠা বাহিনীর নিঃসহায় অবস্থা

তাঁহাকে প্রতিরোধ করিবার জন্য সদাশিব রাওয়ের নেতৃত্বে এক বিরাট মারাঠা বাহিনীও উত্তর-ভারতে প্রেরিত হইল। মারাঠা অভ্যুত্থানে সন্ত্রস্ত অযোধ্যার নবাব সুজাউদদ্দৌলা, রোহিল খণ্ডের নাজির খাঁ প্রভৃতি আফগান বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করিলেন।

অপরপক্ষে মারাঠা বাহিনী তাহাদের অদূরদর্শী নীতির ফলে রাজপুত ও জাঠদের সাহায্য হইতে বঞ্চিত হইল। শিখদের দলে টানিবার মত সুবিবেচনার পরিচয়ও তাহারা দিতে পারিল না। আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফলে হোলকার বাহিনীও যুদ্ধক্ষেত্র হইতে দুরে রহিল।

মারাঠা বাহিনীর পরাজয়

১৭৬১ খ্রীষ্টাব্দে পাণিপথের বিখ্যাত প্রান্তরে মারাঠ৷ বাহিনী পরাজিত ও বিধ্বস্ত হইল; বিশ্বাস রাও ও সদাশিব রাও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। এই দুঃসংবাদে অসুস্থ ও দুর্বল বালাজী বাজীরাও ভগ্নহৃদয় হইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।

পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধের ফলাফল

পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধ ভারত ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা। ইহার ফল হইয়াছিল সুদূর প্রসারী। প্রথমতঃ, এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে মারাঠাগণ কর্তৃক ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বিলুপ্ত হইয়া গেল। এই ভাগ্য বিপর্যয়ের ফলে মারাঠা সাম্রাজ্যবাদের অবসান হইল। দ্বিতীয়তঃ, এই পরাজয়ের ফলে পেশোয়ার মর্যাদাও বিশেষ ভাবে ক্ষুণ্ণ হইল।

মারাঠা শক্তিসংঘের পতন

সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের শাসকগষ্ঠীগুলি অধিকতর স্বাধীনতাকামী হইয়া উঠিল, মারাঠা শক্তি সংঘের সংহতি অনেকখানি বিনষ্ট হইয়া গেল। তৃতীয়তঃ, ভারতের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা আরও প্রকট হইয়া উঠিল।

মারাঠা শক্তি দুর্বল হওয়ার ফলে পাঞ্জাবে শিখদের অভ্যুত্থান সহজ হইল, দাক্ষিণাত্যে মহীশূরের আধিপত্য বিস্তৃত হইল এবং সর্বোপরি ইংরাজদের সাম্রাজ্য বিস্তারের পথ উন্মুক্ত হইয়া গেল।

পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাগণের ব্যর্থতার কারণ (Causes of Failure):

অপ্রতিহত মারাঠা শক্তি

সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ হইতে আরম্ভ করিয়৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর ষষ্ঠ দশক পর্যন্ত মারাঠা শক্তি ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিল। পেশোয়াগণের নেতৃত্বে মারাঠাগণ ভারতের অপ্রতিহত রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হইয়াছিল, দিল্লীর মোগল সম্রাট তাঁহাদের হাতের পুতুলে পরিণত হইয়াছিল ।

কিন্তু তাহা সত্ত্বেও তাহারা শেষ পর্যন্ত ভারতে একটি স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করিতে পারে নাই। পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আকস্মিকভাবে তাহাদের পরাজয় হয় নাই। এই পরাজয় এবং পরাজয়ের পর তাহাদের শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করিবার ব্যর্থতা প্রভৃতি এই সকল ঘটনার পশ্চাতে আরও গভীর কারণ নিহিত আছে।

মারাঠা সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা

প্রথমতঃ, শিরাজীর সাফল্যের ফলে মহারাষ্ট্রে গোঁড়া হিন্দু সম্প্রদায়েরই প্রভুত্ব স্থাপিত হইয়াছিল। কিন্তু মহারাষ্ট্রে বহু বর্ণ প্রচলিত থাকায় তাহাদের মধ্যে বিবাদ ও কলহ লাগিয়াই থাকিত। ইহারই অবশ্যম্ভাবী ফল স্বরূপ গোঁড়া শাসক সম্প্রদায় ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন সময়েই একাত্মবোধ গড়িয়া উঠে নাই, তাহাদের ঐক্য দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।

“Shivaji’s political success sapped the main foundation of that success, In proportion as Shivaji’s ideal of a Hindu Swaraj was based on orthodoxy, it contained within itself the seed of its own death-Dr. Jadunath Sarkar.

অর্থনৈতিক দুর্বলতা

দ্বিতীয়তঃ, মহারাষ্ট্রের অর্থ নৈতিক গঠন বিন্যাসও দুর্বল ছিল। দেশ যথেষ্ট উর্বর না হওয়াতে ভূমি রাজস্বও যথেষ্ট আদায় হইত না। অথচ প্রয়োজনের তাগিদে তাহারা যে ‘চৌথ’ ও ‘সরদেশ মুখী’ আদায়ের পন্থা গ্রহণ করিয়াছিল, তাহাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও জনসাধারণ তাহাদের উপর ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছিল।

সুষ্ঠু শাসনতন্ত্রের অভাব

তৃতীয়তঃ, সাম্রাজ্য বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে দেশের শাসনব্যবস্থার কোন উন্নতি সাধন করিয়া উঠা তাহাদের পক্ষে সম্ভব হয় নাই; অনবরত যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকিয়া তাহারা শাসনযন্ত্র গড়িয়া তুলিতে পারে নাই ।

জায়গীর প্রথার কুফল 

চতুর্থতঃ, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীগণকে বেতন দেওয়ার পরিবর্তে জায়গীর দেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলন করার ফলে তাহাদের আভ্যন্তরীণ সংহতিই বিনষ্ট করা হইয়াছিল ।

জায়গীর প্রথার ফলে সাম্রাজ্য কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত

পঞ্চমত: জায়গীর প্রথার ফলে এবং এক একটি প্রদেশের শাসনভার এক একজন সেনাপতির উপর ন্যস্ত করার ফলে মারাঠা সাম্রাজ্য কয়েকটি  আধা বিচ্ছিন্ন রাজ্যে পরিণত হইয়াছিল।

হিন্দুপাদ পাদশাহী আদর্শ ত্যাগ

ষষ্ঠতঃ, পেশোয়া বালাজী বাজীরাও কর্তৃক ‘হিন্দুপাদ-পাদশাহী’র আদর্শ ত্যাগ ও যথেচ্ছাচার লুটতরাজ হিন্দু দলপতি ও রাজগণকে বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিয়াছিল, সেইজন্যই মারাঠাগণের অতি দুর্দিনেও তাহারা হিন্দু শক্তিগোষ্ঠীগুলির সাহায্য লাভ করিতে পারে নাই।

সৈন্যবাহিনীর জাতীয়তাবোধ বিনষ্ট

সর্বশেষে বালাজী বাজীরাও জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলকে মারাঠা সৈন্যবাহিনীতে গ্রহণ করার ফলে মারাঠাবাহিনীর মধ্যে সংহতি বিনষ্ট হইয়া যায়।

চিরাচরিত যুদ্ধ-কৌশল ত্যাগ

মারাঠাদের চিরাচরিত যুদ্ধকৌশল ত্যাগ করা ও তাহাদের দ্রুত অধঃপতনের অন্যতম কারণ ৷ পাণিপথের প্রান্তরে পরাজিত হওয়ার পরও মারাঠাগণ মাধব রাওয়ের নেতৃত্বে তাহাদের শক্তিকে কিছুকালের জন্য পুনরুজ্জীবিত করিতে প্রয়াস পাইয়াছিল।

কিন্তু আত্মকলহ ও আত্মদ্বন্দ্বের মধ্য দিয়া সে প্রয়াস ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছিল। উদীয়মান ইংরাজ শক্তির সম্মুখে তাহারা বেশীদিন টিকিয়া থাকিতে পারিল না ৷

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

উপসংহার

উপরে উল্লেখিত পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের বর্ণনা আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে । আপনাদের দেওয়া তথ্য ছাড়া আপনাদের কোনো তথ্য জানা থাকলে আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্সতে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আর এই রকম শিক্ষানীয় আরো অন্য তথ্য পেতে আমাদের Whatsapp group -তে Join করার জন্য অনুরোধ রইলো।

FAQs পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ

প্রশ্ন: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ কবে হয়েছিল?

উত্তর: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ 14 জানুয়ারী, 1761 খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল।

প্রশ্ন: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?

উত্তর: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ মারাঠা সাম্রাজ্যের সঙ্গে দুররানি সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।

প্রশ্ন: 1761 সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সময় পেশোয়া কে ছিলেন?

উত্তর: 1761 সালে পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের সময় বালাজি বাজি রাও পেশোয়া ছিলেন।

প্রশ্ন: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে কে জয়ী হয়?

উত্তর: পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে দুররানি সাম্রাজ্য জয়ী হয়।

প্রশ্ন: আহমদ শাহ আবদালী কে ছিলেন?

উত্তর: আহমদ শাহ আবদালী যিনি আহমদ শাহ দুররানি নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিক আফগানিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment