কী কারণে জাপান ও আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে?

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
Rate this post

জাপানের আগ্রাসন:

যুদ্ধের প্রথম দিকে জাপান ও আমেরিকা কেউই প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েনি। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জাপান ও জার্মানি সাম্যবাদ বিরোধী (Anti-Comintern) চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি, ইটালি ও জাপানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ত্রি-পাক্ষিক চুক্তি। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইটালি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত হলেও জাপান সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। কারণ তখনও ওই যুদ্ধ ইউরোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইউরোপে জাপানের কোনো স্বার্থ ছিল না।

জাপান চেয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রের পরিপন্থী ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাধা আসতে পারে আশঙ্কা করেই জাপান ১৯৪০ খ্রিঃ জার্মানি ও ইতালির সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।

এই চুক্তি স্বাক্ষরে জাপানের উদ্দেশ্য ছিল বৃহত্তর পূর্ব-এশিয়া গঠনের নীতি রূপায়ণে জার্মানি ও ইটালির সাহায্য লাভ করা।

আমেরিকার নিরপেক্ষতা নীতি ও নিরপেক্ষতা নীতি থেকে বিচ্যুতি:

অন্যদিকে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে হিটলারের আক্রমণাত্মক মনোভাব লক্ষ্য করে আমেরিকা বুঝতে পারে যে বিচ্ছিন্ন থাকার নীতি অনুসরণ করে আমেরিকা ইউরোপের বিপর্যয় থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না।

তাই প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট মার্কিন কংগ্রেসের কাছে হিটলারের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ইউরোপের রাষ্ট্রগুলিকে মার্কিন সাহায্যের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন।

এসময় ইংল্যান্ডের ওপর জার্মানির ব্যাপক বিমান আক্রমণ এবং ফ্রান্সের পতন ও অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধের সম্প্রসারণ আমেরিকাকে শঙ্কিত করে তোলে।

এই ফ্যাসিবাদী আক্রমণের হাত থেকে পৃথিবীতে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মার্কিন সেনেট ‘লেল্ড-লিজ আইন’ (Lend-Lease Act) পাশ করে মিত্র শক্তিবর্গকে যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধজাহাজ ও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉 যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙনে জাতিসংঘের ভূমিকা

আমেরিকা ও জার্মানির অঘোষিত যুদ্ধ:

আমেরিকার এই নীতিগত পরিবর্তন ও মিত্র শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা স্বাভাবিকভাবেই অক্ষশক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

আমেরিকার বাণিজ্য জাহাজগুলি জার্মান সাবমেরিন কর্তৃক ক্রমাগত আক্রান্ত হতে থাকলে ক্রুদ্ধ আমেরিকা জার্মান সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজগুলিকে আতলান্তিক মহাসাগরে দেখামাত্র গুলি’ (Shoot on sight) করার নির্দেশ দেয়।

এইভাবে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে জার্মানি ও আমেরিকার মধ্যে একটি অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এসময় আমেরিকা নৌশক্তিকে জোরদার করার জন্য একটি বিশেষ পরিকল্পনাও গ্রহণ করে।

পার্লহারবার আক্রমণ:

জাপান যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সুযোগে চিন ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ফরাসি, ওলন্দাজ ও ব্রিটিশ উপনিবেশগুলির ওপর প্রাধান্য বিস্তারে উদ্যোগী হয় এবং ইন্দোচীনের দক্ষিণ অঞ্চল অধিকার করে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে।

জাপানের আগ্রাসী নীতিতে শঙ্কিত আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে কয়েকটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জাপান-মার্কিন বাণিজ্যচুক্তি বাতিল করা হয়, জাপানে যুদ্ধোপকরণ সরবরাহ বন্ধ করা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সকল জাপানি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ইংল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াও জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই অবস্থায় জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো আমেরিকার কাছে একটি চুক্তি প্রস্তাব দিলে আমেরিকা প্রথমেই চিন ও ইন্দোচিন থেকে জাপানি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।

তবে এব্যাপারে বিরোধ মীমাংসার জন্য ওয়াশিংটনে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক বৈঠক হয়। বৈঠক চলাকালীন ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ই ডিসেম্বর জাপানি সেনা হাওয়াই দ্বীপপূঞ্জে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটি পার্লহারবারে বোমাবর্ষণ করে আমেরিকার অনেক জাহাজ ও নৌঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়।

পরের দিন ৮ই ডিসেম্বর আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১০ই ডিসেম্বর জার্মানি ও ইটালি আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ড ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলিও জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবে জাপান ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

6 thoughts on “কী কারণে জাপান ও আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে?”

Leave a Comment