ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমাজতন্ত্রবাদী শক্তিগুলির সাফল্য সংক্ষেপে বিবৃত করো।

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
Rate this post

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে একমাত্র সোভিয়েত রাশিয়াতেই সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষে এই আদর্শ ইউরোপ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সমাজতান্ত্রিক শক্তির আবেদন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ভূখন্ডে বিশেষত হতাশাগ্রস্ত শ্রমিকদের কাছে অনেক গভীর ছিল।

পুঁজিবাদ ও ব্যক্তি মালিকানার ঘোর বিরোধী সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের সঙ্গে ধনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আমেরিকার সংঘাত ছিল। তথাপি সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার জয় সুনিশ্চিত হয়।

পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্র :

পূর্ব ইউরোপের বৃহৎ অংশ সোভিয়েত রাশিয়ার লাল ফৌজ দ্বারা ইতালি ও জার্মান বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করেছিল।

সোভিয়েত রাশিয়া ওইসব অঞ্চল থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ বহু কারখানা তুলে নেয়। ফলে সেখানে অর্থনৈতিক সংকট চরমে ওঠে।

স্বাভাবিকভাবে পূর্ব ইউরোপের এই ভাঙন ধরা অবস্থায় জনগণের সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ দেখা দেয়। আমেরিকা ‘মার্শাল প্ল্যান’-এর মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্রগুলিতে কমিউনিস্ট আন্দোলনগুলিকে দমন করতে সক্ষম হয়।

থেকে ব্রহ্মের অধিকার ফিরিয়ে নেয়। এই সময় বর্মীরা পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করে। ব্রিটিশ সরকার ব্রহ্মদেশ হাতে রাখা আর সম্ভব নয় ভেবে ব্রিটেনের শ্রমিকদল ব্রহ্মের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে ঘোষণা করে।

এর ফলে ১৯৪৭ খ্রিঃ ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রক্ষ্ম-স্বাধীনতা আইন পাশ হয়। ১৯৪৮ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে ব্রহ্মদেশ স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে।

কিন্তু পূর্ব ইউরোপের অবস্থা ছিল অন্যরকম। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সাম্রাজ্যবাদের শক্তিহীনতার পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক শক্তিগুলি জোরদার হয়ে ওঠে এবং তার সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার সক্রিয় সাহায্য ও সহযোগিতায় সেখানে সমাজতন্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় ।

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনগুলি ও জাতীয়তাবাদের প্রভাব

পোল্যান্ডে সমাজতান্ত্রিক সরকার স্থাপন :

১৯৩৯ খ্রিঃ সেপ্টেম্বরে জার্মানি যখন পোল্যান্ড আক্রমণ করে তখন পোল সরকার লন্ডনে আশ্রয় নেয়। ১৯৪৪ খ্রিঃ সোভিয়েত লাল ফৌজ পোল্যান্ডে প্রবেশ করে এবং তারা লন্ডনে নির্বাসিত পোল সরকারকে অস্বীকার করে।

সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ পোল্যান্ডের শাসনভার কমিউনিস্টদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লুবলিন সরকারের হাতে তুলে দেয়। পশ্চিমি দেশগুলি এই সরকারকে মানতে রাজি হয়নি।

কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পোল্যান্ডের অন্যান্য দল এবং লন্ডনে নির্বাসিত পোলিশ সরকারের কিছু সদস্য নিয়ে লুবলিন সরকারকে পুনর্গঠিত করতে রাজি হলে পশ্চিমি শক্তিগুলি এই সরকারকে পোল্যান্ডের অস্থায়ী সরকার হিসেবে মানতে রাজি হয়।

বিভিন্ন দল নিয়ে গঠিত হলেও এই সরকার ছিল প্রকৃতপক্ষে কমিউনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণাধীনে। ১৯৪৭ খ্রিঃ জানুয়ারিতে পোল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন হয় তাতে পোল জাতীয় সমিতি ৮০% ভোট পেয়ে সরকার গঠন করে।

পোল পেজেন্ট পার্টির মতে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধভাবে হয়নি। ১৯৪৮-এর ডিসেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ার্কার্স পার্টি ও পেজেন্ট পার্টি যুক্ত হয়ে পোলিশ ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স পার্টি সরকার গঠন করে এবং দেশে সমাজতন্ত্র স্থাপনের কাজ শুরু করে।

রুমানিয়ায় সমাজতন্ত্রীদের ক্ষমতা লাভ :

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে রুমানিয়ার রাজা মাইকেল দেশের কমিউনিস্টদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এক সরকার গঠন করেন। এ সময় কমিউনিস্ট ছাড়া পেজেন্ট পার্টি শক্তিশালী ছিল।

১৯৪৭ খ্রিঃ ব্রিটিশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে পেজেন্ট পার্টির অনেক নেতার প্রাণদণ্ড হয় এবং এই পার্টি ভেঙে দেওয়া হয়।

পরের বছর সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত করে মার্চের নির্বাচনে ৪১৪ টি আসনের মধ্যে ৪০৫ টি আসন লাভ করে। এই ভাবে রুমানিয়াতে সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

চেকোশ্লোভাকিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সরকার স্থাপন :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর এডওয়ার্ড বেনেস (Edward Benes) পুনরায় চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট হন। তিনি কমিউনিস্ট সহ দেশের বিভিন্ন পার্টির প্রতিনিধিদের নিয়ে গণতন্ত্রী সরকার গঠন করেন।

এদিকে রুশ লাল ফৌজের ছত্রছায়ায় চেক কমিউনিস্ট দল শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গণতন্ত্রী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট গটওয়াল্ড এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যাকলাভ নোসেক (Voclov Nosek) ছিলেন কমিউনিস্ট।

১৯৪৮ খ্রিঃ নোসেক প্রাগের ৮জন অ-কমিউনিস্ট পুলিস অফিসারকে পদচ্যুত করে তাদের স্থানে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন অফিসার নিয়োগ করেন। এর প্রতিবাদে ১২জন অ-কমিউনিস্ট মন্ত্রী পদত্যাগ পত্র পেশ করেন।

তারা ভেবেছিলেন যে, কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী তাদের পত্র গ্রহণ করবেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড এই পদত্যাগ পত্রগুলি গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রপতি বৈনেস এর কাছে সুপারিশ করেন।

বেনেস এই সুপারিশ গ্রহণ করেন এবং কার্যকর করেন। গটওয়াল্ড এই খালি পদে কমিউনিস্টদের মন্ত্রীপদে নিয়োগ করেন। ফলে চেকোশ্লোভাকিয়ায় সমাজতন্ত্রী সরকার স্থাপিত হয়।

যুগোশ্লোভাকিয়া, পূর্ব জার্মানি ও হাঙ্গেরিতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে মার্শাল টিটো (Tito)-র নেতৃত্বে যুগোশ্লোভাকিয়া কমিউনিস্ট পার্টি শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে ওঠে।

জনসাধারণের সঙ্গে এই পার্টির ছিল নিবিড় সংযোগ। নিজেদের চেষ্টাতেই মার্শাল টিটোর নেতৃত্বে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা লাভ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত পূর্ব জার্মানিতে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয় এবং সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা গঠিত হয়।

হাঙ্গেরিতেও সমাজতান্ত্রিক সরকার স্থাপিত হয়। সেখানে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশের বিভিন্ন পার্টিকে একত্র করে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় স্বাধীনতা ফ্রন্ট এর মাধ্যমে সমাজতন্ত্র স্থাপনের চেষ্টা করা হয় ।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া :

এশিয়াতেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজতন্ত্রের ঢেউ এসে যায়। ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচিন, ব্রহ্মদেশ প্রভৃতি দেশে সমাজতন্ত্রের ভাবধারার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

ওইসব দেশে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন প্রথম থেকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে পরিচালিত হয়েছিল। সোভিয়েত রাশিয়া ও চিনের সমর্থনে ওই সব দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সুদৃঢ় হয়।

ইন্দোচিন বা ভিয়েতনামে সমাজতন্ত্রের জয় :

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ইন্দোচিন বা ভিয়েতনাম যথাক্রমে কাম্বোডিয়া, আন্নাম, কোচিন- চিন, লাওস ও টংকিং অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ফরাসিরা ইন্দোচিনে তাদের শাসন কায়েম করে রেখেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ইন্দোচিন বা ভিয়েতনাম দখল করে। সেই সময় থেকে ড. হো-চি-মিনের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী ইন্দোচিনারা জাপানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই চালায় (১৯৪২ খ্রিঃ)।

এ সময় থেকেই তারা ইন্দোচিনের প্রাচীন নাম ভিয়েতনাম নামটি ব্যবহার করে। পটসডাম সম্মেলনের শর্ত অনুযায়ী জাপান ইন্দোচিন ছেড়ে চলে গেলে ফরাসিরা আবার ভিয়েতনামে ফিরে এলে হো-চি-মিন এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট দল দেশের স্বাধীনতার জন্য মরণপণ লড়াই চালায়।

এক ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের অকমিউনিস্টদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ‘ভিয়েতনাম স্বাধীনতা লিগ’ গঠন করেন।

এই দল উত্তর ভিয়েতনামের হ্যানয় দখল করে, সেখানে হো-চি-মিনের নেতৃত্বে “স্বাধীন ভিয়েতনাম গণতন্ত্রী প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত করে। ফলে হো-চি-মিনের সরকাররের সঙ্গে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সংঘর্ষ শুরু চায় যায়।

শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ খ্রি, কমিউনিস্ট বাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সাইগন দখল করে। ফলে ভিয়েতনামী সমাজতন্ত্রের চূড়ান্ত জয় হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট শাসিত ঐক্যবদ্ধ ভিয়েতনাম জন্ম লাভ করে।

কাম্পুচিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন কাম্পুচিয়া (কম্বোডিয়া) ও লাওসে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পাশাপাশি কমিউনিস্ট আন্দোলনও চলতে থাকে। ভিয়েতনামের মতো কাম্পুচিয়া ও লাওস ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভ করে।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ব্রহ্মদেশ, মালয়েশিয়া, বা ইন্দোনেশিয়াতে সমাজতান্ত্রিক শক্তির মূল যথেষ্ট দৃঢ় হলেও রাজনৈতিক সফলতা ততটা অর্জন করতে পারেনি যতটা সম্ভব হয়েছিল ইন্দোচিনে।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment