ট্রুম্যান নীতি কি? ট্রুম্যান ডকট্রিনের উদ্দেশ্য

WhatsApp Group (Join Now) Join Now
Telegram Group (Join Now) Join Now
Rate this post

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার আধিপত্য বৃদ্ধি এবং এশিয়ার দেশগুলিতে তার প্রভাব বৃদ্ধি আমেরিকা সহ পশ্চিমি দেশগুলির উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। ইউরোপ ও এশিয়ার সদ্য-স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শ ছড়িয়ে পড়ে।

সোভিয়েত রাশিয়ার সাম্যবাদী সংগঠন বিশ্ববাসীর প্রশংসা লাভ করে। শক্তিশালী রুশ লাল ফৌজের মদতে পোল্যান্ড, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, যুগোশ্লাভিয়া প্রভৃতি দেশে কমিউনিস্ট দল অকমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে উদ্যোগী হয়।

গ্রিস ও তুরস্কে কমিউনিজম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। গ্রিসের প্রতিবেশী কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলির মদতে গ্রিসের কমিউনিস্ট গেরিলা বাহিনী সেখানকার ব্রিটিশ সাহায্যপুষ্ট রাজতন্ত্রী সরকারের উচ্ছেদ ঘটাতে উদ্যোগী হয়।

যুদ্ধের পর ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি অর্থনৈতিক দিক থেকে এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে তাদের পক্ষে রাশিয়ার প্রভাব প্রতিহত করা সম্ভব ছিল না। ব্রিটেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে তার সেনাদল ও আর্থিক সাহায্য তুলে নিতে থাকে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর আমেরিকা সরকারকে এক গোপন নোটের মাধ্যমে জানায় যে, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে মার্চের পর গ্রিস ও তুরস্ক থেকে ব্রিটিশ সেনা তুলে নেওয়া হবে এবং আর্থিক সাহায্যও বন্ধ করা হবে।

ব্রিটেন আমেরিকাকে সতর্ক করে দেয় যে, গ্রিস কমিউনিস্টদের হাতে চলে গেলে গোটা পূর্ব- ভূমধ্যসাগর ও বল্কান অঞ্চল মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

গ্রিস থেকে তুরস্ক ও মিশরের মধ্য দিয়ে কমিউনিজম ছড়িয়ে পড়বে উত্তর আফ্রিকায়, ইরানের মধ্য দিয়ে প্রাচ্যে, আর উত্তর আফ্রিকা থেকে ফ্রান্স ও ইতালিতে।

এসময় সোভিয়েত রাশিয়ায় নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ কেন্নান (George F. Kennan) পরামর্শ দেন যে, মার্কিন সরকারের এখন উচিত কমিউনিস্ট রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে না গিয়ে সোভিয়েত অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যেই সোভিয়েত অধিকারকে বেড়া দিয়ে সীমাবদ্ধ রাখা।

তবে তার বাইরে আসার চেষ্টা করলে স্থানীয় যুদ্ধের দ্বারা তাকে তার সীমার মধ্যে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া। প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান এই পরামর্শ মেনে এই পটভূমিতে পৃথিবীকে সাম্যবাদী প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে ১২ই মার্চ, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যে তত্ত্ব বা নীতি ঘোষণা করেন তা ট্রুম্যান নীতি (Truman Doctrine) নামে পরিচিত।

🔥আরও পড়ুনঃ-

👉ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝো?

ট্রুম্যান নীতি কি?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান ঘোষণা করেন যে, বর্তমান পৃথিবী এখন মুক্ত গণতান্ত্রিক এবং সাম্যবাদী দুটি ধারায় বিভক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সব মুক্ত জাতিগুলির স্বাধীনতা ও জাতীয় অখন্ডতা রক্ষা করা ও আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।

তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে পৃথিবীর সব মুক্ত মানুষকে সমর্থন ও সহযোগিতা করবে। যারা সশস্ত্র সংখ্যালঘু বা বিদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাদের সাহায্য করা হবে।

তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, “মুক্ত জনগণের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রধানত অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়াই আমাদের কর্তব্য”। এই পরিপ্রেক্ষিতে টুম্যান মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ক্রমে গ্রিস ও তুরস্ককে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেন।

ক্রমে এই নীতি অনুসারে বহু দেশে মার্কিন আর্থিক, সামরিক ও অন্যান্য সাহায্য দেওয়া হয়। বিশ্বের কোনো অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন হলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করবে ট্রুম্যান নীতির এটাই ছিল মূল কথা। এই কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে উদ্যোগী হয়।

তবে ট্যুমান যে যুক্তির ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সাহায্যের কথা বলেন তা গ্রিস বা তুরস্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল না। কারণ ওই দুটি দেশে গণতন্ত্রসম্মত সরকার ছিল না।

বল্কান অঞ্চলে রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ করা এবং নিকট ও মধ্য প্রাচ্যের তৈল সম্পদকে রাশিয়ার কবল থেকে মুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে ওই দুটি দেশকে আমেরিকা সাহায্য করে। এভাবে টুম্যান নীতির পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপ ও এশিয়ার এক বিরাট অঞ্চলে মার্কিন সাহায্য (Aid) দেওয়া হয়।

ট্রুম্যান নীতির আসল উদ্দেশ্য :

ট্রুম্যান নীতির ঘোষিত উদ্দেশ্য সাম্যবাদ প্রসার রোধ করা বলা হলেও এর পেছনে অর্থনৈতিক সামরিক স্বার্থ ছিল বলে অনেকে মনে করেন। একদল মনে করেন, অর্থ সাহায্যের নাম করে অস্ত্র ও শিল্পজাত পণ্য বিক্রি করা এবং অল্প সুদে মূলধন লগ্নি করাই ট্রুম্যান নীতির গোপন উদ্দেশ্য ছিল।

অন্য একদল মনে করেন, মার্কিন শিল্পে, বাণিজ্য, অস্ত্র কারখানায় যাতে ছাঁটাই, মন্দা ইত্যাদি দেখা না দেয় তার জন্য শিল্পপতি, বণিকরা ও অস্ত্রকারখানার মালিকরা ট্রুম্যানকে চাপ দিয়েছিল।

তাই ট্রুম্যান ডকট্রিনের ঘোষণা দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য রক্ষা করেন। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চাপে ইউরোপীয় দেশগুলির সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে থাকে। এই সুযোগে ওই সব দেশকে সাহায্যদানের নামে ঋণজালে আবদ্ধ করে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ গড়ে তোলাও ট্রুম্যান নীতির একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বলে অনেকে মনে করেন।

উপসংহার :

পরিশেষে বলা যায় ট্রুম্যান নীতির ফলে সারা বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব যে প্রসারিত হয়েছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সাম্যবাদবিরোধী এই নীতির ফলে উদ্ভব হয়েছিল ‘ঠান্ডা লড়াই’ (Cold war)। এর ফলেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বের রাজনীতি অস্থির হয়ে উঠেছিল।

Hey, My Name is Priyanka From Diamond Harbour, West Bengal & I Have Been Blogging Since 3 Years Ago. I Have 10+ Websites Which I Manage by Myself. I completed my graduation in philosophy.

Leave a Comment